ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রধানমন্ত্রীর ‘জমি আছে ঘর নাই’ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বরাদ্দ পাওয়ার পরেও ঘর পায়নি ফরিদপুরের জেলা সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নের ৪৭টি পরিবার। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে তাদেরকে ঘর বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করে দেওয়া হয়। কিন্তু অদ্যাবধি তারা সে ঘর পাননি। চোখের সামনে ওই প্রকল্পে অন্যরা ঘর তুললেও তাদেরকে এখনও ঘুরানো হচ্ছে। এ অবস্থায় তারা জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় নিজ জমিতে ঘর তৈরির জন্য গৃহহীনদের ১ লাখ টাকা করে প্রদান করা হয়। জেলা সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় চার শতাধিক গৃহহীন পরিবারকে এই বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই বছরের ২ নভেম্বর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ নম্বর পত্রে সংশ্লিষ্ট চিঠির মাধ্যমে তাদেরকে বরাদ্দের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, একটি চক্র দুর্নীতি করে এসব নাম বাদ দিয়ে তাদের পছন্দের লোকদের নামভুক্ত করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ফরিদপুরের সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের চর আদমপুরের মৃত সালমান ফকিরের স্ত্রী হাফেজা বেগম (৫৫)। স্বামীর সূত্রে পাওয়া ৩ শতাংশ জমিতে তিনি বাস করেন। বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন।
হাফেজা বেগম বলেন, দুই বছর আগে একটা চিঠি দিয়েছিল ঘর করার টাকা দেওয়ার জন্য। এখনো টাকা পাইনি। কয়েকবার অফিসেও ডেকেছিল। জমির দলিল ও জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়েছিল। সবকিছুই জমা দিয়েছি। কিন্তু ঘর করার আর টাকা দেয়নি।
রিকশাচালক আনোয়ার জোয়ার্দার বলেন, আমাওদর ঘর বরাদ্দ হলেও পাইনি। তবে পাশের রিয়াজুল খাঁ ঘর ওই টাকা পেয়ে ঘরও তুলছে। কী কারণে তাদের বাদ দিয়েছে জানি না। সম্প্রতি ধারদেনা করে তিনি পাটখড়ির ঘর বাদ দিয়ে একটি টিনের চালা তুলেছি ভিটায়।
একই ধরনের অভিযোগ এই প্রকল্পের বরাদ্দপ্রাপ্ত আনোয়ার হোসেন, আনোয়ার জমাদ্দার, রেজিয়া বেগম, খোদেজা বেগম, রহিম মোল্যা, আলী বেপারী, আনোয়ারা বেগমসহ অন্যদের।
এ ব্যাপারে জানতে তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুধাংশু মহান সোমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার সময়ে এই প্রকল্পে ১০টির মতো ঘর হয়। বাকিগুলো সম্বন্ধে আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে সময়ে এসব ঘর করার বিষয়টি সরেজমিনে দেখাশুনা করেন ওই কার্যালয়ের তৎকালীন অফিস সহকারী মিজানুর রহমান ও টেকনিশিয়ান জুয়েল মণ্ডল।
মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলা হতে ঢাকায় পাঠানো তালিকার বাইরে এসব যোগ করা হয়। ফলে বরাদ্দের পরে তাদের নাম বাতিল করা হয়।
জুয়েল মণ্ডল বলেন, সে সময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মোহতেশাম হোসেন বাবর এসব বরাদ্দপ্রাপ্তদের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে নাম অনুমোদন করিয়ে আনেন। এছাড়া প্রকল্পের শর্তানুসারেও কয়েকজনের নাম বাদ পড়ে যায়। তবে এ সংখ্যা ঠিক কতজন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর সদর উপজেলার বর্তমান দায়িত্বরত নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রেজা বলেন, এ ব্যাপারে দশজনের মতো লোকের অভিযোগ পেয়েছি। এই প্রকল্প নিয়ে কিছু কথা উঠেছে। বরাদ্দের পরেও ঘর না পাওয়াদের অনেকে হতদরিদ্র ও বরাদ্দ পাওয়ার উপযুক্ত স্বীকার করে তিনি বলেন, কি কারণে তারা ঘর পায়নি বিষয়টি খতিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে কোনো দুর্নীতি হয়েছে কিনা সেটিও খুঁজে বের করা হবে।
ওডি/এসজেএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড