• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অনেক কষ্ট করে টাকা পাঠিয়েছি মাসের পর মাস : অনিকের বাবা

  রাজু আহমেদ, রাজশাহী

১০ অক্টোবর ২০১৯, ২২:০০
অনিক সরকার
ফাহাদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি অনিক সরকার (ফাইল ফটো)

‘কারও সন্তান যেন এমন না হয়, আমি আশা করব অনিকের মতো আর কেউ যেন ভুল পথে না যায়।’ হতাশ কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতা অনিক সরকারের বাবা আনোয়ার হোসেন।

অনিক সরকার রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বড়ইকুড়ি গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে।

ছাত্রলীগের দুই সদস্যের নিজস্ব তদন্ত কমিটি ও প্রত্যক্ষদর্শীর ফোনালাপে উঠে এসেছে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অনিক নিহত আবরারকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করে। এ ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদধারী অনিক সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে দল থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। অনিক আবরার হত্যা মামলায় ৩ নম্বর আসামি।

অনিকের এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনিকের বাবা আনোয়ার হোসেন সরকার এলাকায় একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। কাপড়সহ পেট্রোলপাম্প ও সারের ডিলারের ব্যবসা রয়েছে তার। মা শাহিদা বেগম একজন গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে অনিক ছোট।

অনিকের বাবা জানান, ‘ছেলেকে পাঠিয়েছি পড়ালেখা করতে। অনেক কষ্ট করে তাকে টাকা পাঠিয়েছি মাসের পর মাস। কিন্তু কে জানত সে এ ধরনের অমানবিক কাজে জড়িয়ে যাবে। সব বাবা-মা চায় তার সন্তান ভালোভাবে পড়ালেখা করুক, বাবা-মার মুখ উজ্জল করুক। কিন্তু অনিক এমন হত্যার সঙ্গে জড়িয়ে যাবে ভাবতে পারছি না। আইন সবার জন্য সমান। আমার ছেলে অপরাধী হলে প্রচলিত আইনে তার যে সাজা হবে আমি মেনে নেব। আমি চাই আমার ছেলের বিচার হোক।’

অনিকের বাবা আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘অনিক রাজশাহীতে থাকা অবস্থায় কোনো রাজনীতি করত না। কারও সঙ্গে তেমন মিশত না। কী করে সে রাজনীতিতে প্রবেশ করল তা জানি না। আমরা জানি অনিক সেখানে পড়ালেখা করছে। যখন জানতে পারলাম অনিক এক ছাত্রকে হত্যা করেছে। সেই দায়ে তাকে আটক করেছে পুলিশ। আমরা অবাক হয়ে গেছি। কখনো ভাবিনি আমার ছেলে কাউকে খুন করবে। এক গাছে ১০টা কুড়ি হলেও ১০টাই ফল হয় না। অনিকও কুড়ি ছিল ফল হতে পারেনি। পরিবারের সবাই সমান নয়। একজনকে দিয়ে পরিবারের সবার বিচার করা উচিত নয়। আমি চাই প্রচলিত আইনে অনিকের বিচার হোক।’

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অনিক সরকার ওরফে অপু ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্র। তিনি মোহনপুর কেজি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হোন। এরপর ৮ম শ্রেণিতেও বৃত্তি পান তিনি। ২০১৩ সালে একই বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন তিনি।

এরপর ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে ২০১৫ সালে জিপিএ ৫ পেয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হয় অনিক। বর্তমানে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র।

মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান মেহবুব হাসান রাসেল জানান, অনিক অপরাধী হতে পারে। প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। কিন্তু অনিকের পরিবার আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ একজন কর্মী। এমনকি তার পরিবাবের প্রবীণ সদস্যরাও স্বাধীনতার আগ থেকে আওয়ামী লীগ করে আসছেন।

অনিকের মামা মোহনপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল মোমিন শাহ্ গাবরু বলেন, ১৯৯১ ও ১৯৯৫ সালে মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। ২০০৩ ও ২০১৫ সালে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এখনো দায়িত্বে আছি।

উল্লেখ্য, রবিবার (৬ অক্টোবর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। নিহত ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।

ওডি/এসএএফ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড