চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর শহরের মেঘনা সংযুক্ত ডাকাতিয়া নদীতে গত তিন দিনে ৫ কিলোমিটার এলাকায় খাঁচায় চাষকৃত মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এতে আড়াইশ চাষির প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাষের সঙ্গে জড়িত মালিক ও শ্রমিক মিলিয়ে কমপক্ষে ৪ শতাধিক মানুষ এখন বেকার হয়ে পড়েছে। মাছ মরে যাওয়ার কারণ পরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগ।
খবর পেয়ে শহরের রঘুনাথপুর ডাকাতিয়া নদীতে ছুটে যান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি ও সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদুল হাসানসহ চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের একাধিক গবেষক।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিক্রির উপযোগী খাঁচার মধ্যে মাছ মরে ভেসে আছে। আবার কেউ কেউ এ মাছ তুলে পাড়ে নিয়ে ৬০ টাকা ধরে বিক্রি করছেন। এছাড়া দেশীয় প্রজাতির মাছও মরে ভেসে আছে। বিষাক্ত কেমিকেল, নদীতে প্রচুর পরিমাণে ঝাঁক ফেলা ও প্রচুর পরিমাণে কচুরিপানা রয়েছে। এসব কারণেও মাছ মারা যেতে পারে বলে মনে করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। এছাড়া তিনি নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে পানি পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে গেছেন।
মাছ চাষি মো. আলমগীর মিয়াজী বলেন, ২০০২ সালে ডাকাতিয়া নদীতে সর্বপ্রথম খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয়। এরপর এই পদ্ধতি সারা দেশে মডেল হিসেবে নেওয়া হয়। এখন চাঁদপুর শহর অঞ্চলে প্রায় ২৫০ জন মাছ চাষি রয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে তাদের খাঁচায় স্বল্পসংখ্যক মাছ মরলেও গত ৩ দিন ধরে আস্তে-আস্তে খাঁচায় থাকা সব মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এসব মাছ খাওয়ার উপযোগী নয়। কীভাবে পানি দূষণ হলো তা আমরা বলতে পারছি না।
মৎস্য ব্যবসায়ী মো. তাজুল ইসলাম ও সোহেল বলেন, এই অঞ্চলের প্রত্যেক চাষির ৮ থেকে ১০টি করে খাঁচা রয়েছে। এসব খাঁচায় তেলাপিয়া, রুই, কই ও পাঙ্গাস মাছ চাষ করা হয়। তিন দিনে পানি দূষণ হওয়ায় সব মাছ মরে ভেসে উঠেছে। আমাদের সবার বিনিয়োগ এখন পানির সাথে ভেসে গেল। চাষে জড়িত সবাই এখন বেকার হওয়ার পথে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি দৈনিক অধিকারকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পানিতে এমোনিয়ার মাত্রা বেড়ে এবং অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় মাছগুলো মরেছে। এছাড়া নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কেমিকেল ও ফার্নেস ওয়েল মিশ্রিত পানির প্রভাবেও মাছ মারা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ঘটনাস্থল এলাকা থেকে মরা মাছ, পানি ও মাটি সংগ্রহ করেছি। মৎস্য বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা করলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে মাছ মরার কারণ বলা যাচ্ছে না। আমাদের এক্সপার্টরা পানি, মাটি ও মরা মাছগুলো পরীক্ষা করে দেখছেন। আগামী দুদিনের মধ্যে মাছ মরার কারণ জানা যাবে।
উল্লেখ্য, চাঁদপুরের খাঁচায় মাছ চাষে ২৫০ জন চাষি রয়েছেন। তাদের এই মৎস্য খামার কাজে ৪শ শ্রমিক জড়িত রয়েছে।
ওডি/এমবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড