আমিনুল ইসলাম, পাবনা
পাবনায় পদ্মা নদীর পানি এখন বিপদ সীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাবনার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি প্রবাহ কমেছে ৫ সেন্টিমিটার। হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার ৬টি উপজেলার অনেক এলাকায় কৃষি ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি ভাঙনের মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী ১০টি ইউনিয়ন। ভাঙন প্রতিরোধে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পদ্মায় হঠাৎ পানি বাড়ার কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার ছয়টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের মানুষ। ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী, রুপপুর, লক্ষীকুন্ডা, সারাবাড়ি ইউনিয়ন, পাবনা সদরের দোগাছি ইউনিয়নের কোমরপুর, চরসাদিপুর, চর আশুতোষপুর, চর সাদিরাজপুর, রানীনগর,পীরপুরসহ পদ্মার পানির নিচে তলিয়ে গেছে অনেক বসত বাড়ি।
এ দিকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে পাবনা সদরের দোগাছি, ভাড়ারা ও ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশি, রুপপুর, লক্ষিকুন্ড ও দোগাছি ইউনিয়নের পদ্মাপার সংলগ্ন বেশ কিছু চরাঞ্চলে। এছাড়াও সুজানগর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুরে নিম্নাঞ্চলের ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ডুবে গেছে শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসল।
পাবনা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, পাবনায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে প্রায় ১৭শ ত্রিশ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শীতের আগাম সবজি ও উঠতি ব্রি ধানে।
অপরদিকে সদর উপজেলার ভাড়ারা, হেমায়েতপুর, দোগাছি ইউনিয়ন, সুজানগর উপজেলার ভায়না, সাতবাড়িয়া, নাজিরগঞ্জ, মানিকহাট, সাগরকান্দি ইউনিয়নের অনেক এলাকা পদ্মা নদীর ভাঙনের মুখে রয়েছে। অপিরকল্পিতভাবে বালু উত্তলনের জন্য গ্রামগুলো এখন নদী ভাঙনের মুখে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, গত দু’দিনে পদ্মার পানি বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শনিবার পানি কমে বিপদ সীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে চলছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি বিপদসীমার নিচে নেমে আসবে বলে তাদের ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন ভাঙন কবলিত এলাকাতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর মধ্যে পদ্মা নদী বেষ্টিত পাবনার সুজানগর উপজেলার গুপিনপুর এলাকায় এলজিইডির সড়ক, গোরস্থান ও ঈদগাহ মাঠ নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য আড়াই হাজার জিও ব্যাগ (বালুর বস্তা) ফেলানোর কাজ শুরু হয়েছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজহার আলী জানান, হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে পাবনা অঞ্চলের কৃষির ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। এর আর্থিক পরিমাণ প্রায় সাত কোটি টাকা।
তিনি জানান, শনিবার পর্যন্ত পাওয়া হিসেবে ১৭শ ৩০ হেক্টর জমির নানা রকম ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক যাতে আবার ধান রোপণ করতে পারে সে ব্যাপারে তাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। সরকারিভাবে তাদের জন্য কোনো সুযোগ সুবিধা এলে অবশ্যই চাষিদের কাছে খুব দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হবে।
পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ দৈনিক অধিকারকে জানান, হঠাৎ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ত্রাণ হিসেবে ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সুজানগর উপজেলায় বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য প্রত্যেক উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড