বাগেরহাট প্রতিনিধি
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বাসতলী গ্রামে দেড় বছর বয়সী একটি গরু গত ৪ মাস ধরে দৈনিক চার কেজি করে দুধ দিচ্ছে। বাসতলী গ্রামের মহানন্দ মন্ডলের এই গরুটির নাম রেখেছে শ্যামলী। কোনো ধরনের বাচ্চা প্রসব ছাড়াই গরুটি দুধ দেয়। আর এ দুধকে সর্ব রোগের ওষুধ হিসেবে খাচ্ছেন হাজারো মানুষ।
প্রতিদিন গরুটির দুধ নিতে মহানন্দের বাড়িতে ভিড় করছে হাজারো মানুষ। ভোর থেকেই শ্যামলী গরুর দুধ নিতে লম্বা লাইন পড়ে। কেউ খালি হাতে, কেউ বোতল নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই দুধ পান করে বিভিন্ন রোগমুক্তির আশায় মহানন্দের বাড়িতে মানুষের ভিড় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ বলছে হরমন জনিত সমস্যার কারণে বাচ্চা প্রসবের আগেই গরুর বানে দুধ আসতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহানন্দের বাড়ির সামনে রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ রয়েছে অটোবাইক, রিকশা, মোটরসাইকেল ও মাহিন্দ্রসহ নানা যানবাহন। বাড়িতে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে দীর্ঘ লাইনে। বাড়ির আঙ্গিনায় শিশুসহ হাজারও নারী পুরুষ। রয়েছে ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক, হাত মাইকে বলা হচ্ছে শৃঙ্খলা সঙ্গে অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্যামলী দুধ দেবে।
গরুর মালিক মহানন্দ মন্ডল জানান, ‘বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের কোন্ডলা গ্রামের সরোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ৮ মাস বয়সী একটি বকনা বাছুর ক্রয় করি। বর্তমানে যার বয়স ১৮ মাস। গত চারমাস আগে গোয়ালঘরে গিয়ে ওই বকনাটির বান থেকে দুধ পড়ছে দেখতে পাই। দুই তিনদিন একই ঘটনা দেখার পরে আমরা দুধ সংগ্রহ শুরু করি। পরে বিষয়টি জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগকে অবহিত করি। তারা বলেন, এই দুধ খেলে কোনো সমস্যা হবে না। এরপর থেকেই আশপাশের মানুষ দুধ খাওয়া শুরু করে। তবে অনেকেই বলতে থাকে এই দুধ খেয়ে তাদের বিভিন্ন রোগ সেরেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে দুধ নিতে অনেক মানুষ আসে। কিন্তু পর্যাপ্ত চাহিদা মেটাতে পারছি না।’
গরুর দুধ নিতে হাজারো মানুষের ভিড় ( ছবি : দৈনিক অধিকার )
তিনি আরও জানান, ‘দুধের বিনিময়ে আমরা কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেই না। কিন্তু কেউ যদি কোনো টাকা দেয় আমরা সেটা গ্রহণ করি শ্যামলীর খাবারের জন্য। আর যদি একটু বেশি টাকা দিত তাহলে শ্যামলীর জন্য একটি ভালো গোয়াল ঘর বানাতে পারতাম।’
পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে দুধ নিতে আসা নারায়ন দাস ও স্থানীয় মনিরুল জানান, ‘কয়েকদিন ধরে দেখছি অনেক লোক সকালে হাজির হয় দুধ নিতে। শুনেছি এ গরুর দুধ খেলে অনেক রোগ ভালো হয়। তাই আসছি দুধ নিতে।’
দুধ নিতে আসা রওশনারা বেগম নামে আরও একজন জানান, কোমড়, ঘাড় ও পিঠে প্রচুর ব্যথা ছিল। দুদিন আগে এ গরুর দুধ খেয়ে একটু ভালো অনুভব করছি। তাই আবার আসছি।
মল্লিকেরবেড় এলাকার লিলি বেগম জানান, আমি ডাক্তার দেখিয়েছিলাম ঢাকা পিজিতে। তারপরও সুস্থ হইনি। কিন্তু এই দুধ খাওয়ার পরে সুস্থ হয়েছি। এছাড়াও বাগেরহাট শহরের আনছার আলী, মহিউদ্দিন, নাছিমাসহ আরও কয়েকজন জানালেন দুধ খেয়ে উপকার পাওয়ার কথা।
এ বিষয়ে বাশতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী জানান, দুধ নিতে প্রতিদিন মহানন্দের বাড়িতে হাজার হাজার লোক আসে। শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য স্থানীয় লোকজন ও চকিদাররা সহযোগিতা করছে।
বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান জানান, অনেক সময় হরমন জনিত সমস্যার কারণে বাচ্চা প্রসবের আগেই বকনার বানে দুধ আসতে পারে। এটা একটি সমস্যা। তবে এ দুধ খেলে কোনো সমস্যা হবে না। গাভীর দুধের মতো এ দুধও খাওয়া যায়। তবে কেউ যদি রোগমুক্তি বা বিশেষ কোনো কারণে এই দুধ পান করে থাকেন তবে এটা তার একান্ত নিজস্ব বিশ্বাসের ব্যাপার। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।
ওডি/এসএএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড