• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বন্যার পানিতে ভেসে আসছে ভারতীয় বিষধর সাপ, বাড়ছে আতঙ্ক

  কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

০৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:১১
বন্যা
বন্যায় বাড়ি-ঘর প্লাবিত হয়েছে (ছবি : দৈনিক অধিকার)

কমতে শুরু করেছে কুষ্টিয়ার পদ্মার পানি। তবে দৌলতপুরে বন্যা কবলিত এলাকায় ব্যাপকভাবে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব বেড়েছে। প্রতিদিনই পানিতে ভেসে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপ। ভারত থেকে বন্যার পানির সঙ্গে এসব সাপ ভেসে বাংলাদেশে আসছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বন্যায় দুর্ভোগের সঙ্গে নতুন করে সাপের আতঙ্ক বিরাজ করছে পানিবন্দি এসব মানুষের মধ্যে।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ও শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত পদ্মায় পানি স্থিতিশীল থাকার পর শুক্রবার বিকালে ভেড়ামারা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে শূন্য দশমিক ১ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। বর্তমানে সেখানে ১৪ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমে যাওয়ার আনন্দ থাকলেও জনমনে বিরাজ করছে সাপের আতঙ্ক।

বন্যাকবলিত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩৮ গ্রামের ১০ হাজার পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গত ১০ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। প্রায় ৩ হাজার পরিবারের বাড়ি-ঘরে পানি উঠে পড়েছে। এসব পরিবারের অধিকাংশই বাঁশের মাচা ও ঘরের চৌকিকে ইটের উপর উঁচু করে বসিয়ে কোনো রকমে জীবনযাপন করছেন। বাড়িঘরে পানি উঠে আসায় পানির সঙ্গে বিষাক্ত সাপও ভেসে আসছে। প্রতিদিনই গ্রামবাসী বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ঘরের চালায়, গাছপালায় ও পানিতে ভেসে বেড়াতে দেখছেন। দিনের আলোতে সাপগুলোকে দেখা গেলেও রাতের অন্ধকারে কখন ঘরের মধ্যে চলে আসছে তা বোঝা যাচ্ছে না। তাই রাতের বেলায় সাপের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।

চিলমারী ইউনিয়নের খারিজাথাক গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিন আলী জানান, প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় সাপ দেখা যাচ্ছে। অনেকগুলোকে মেরে ফেলা হয়েছে। আবার দেখতে ভয়ঙ্কর কিছু কিছু সাপের কাছে ভয়ে কেউ যাচ্ছেন না।

এ দিকে দৌলতপুর সাংসদ আ ক ম সারওয়ার জাহান বাদশাহ দৌলতপুরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার দুপুরে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এনামের সঙ্গে সাক্ষাত করলে প্রতিমন্ত্রী দৌলতপুরের বর্ন্যাতদের জন্য তাৎক্ষণিক ১০০ টন চাল ও নগদ ৫ লক্ষ টাকা বিশেষ বরাদ্দ করেন।

দৌলতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, দুর্গত এলাকায় প্রতিদিন ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। দুর্গতদের ইতোমধ্যে চিড়া, বিস্কুট, তেল ও নুডুলসসহ ৬ হাজার প্যাকেট ত্রাণ, ২২ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২০ মেট্রিকটন চাল ও এক হাজার মেট্রিকটন শুকনা খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শনি ও রবিবার সেগুলো বিতরণ করা হবে।

দৌলতপুর আসনের সাংসদ অ্যাড. আ ক ম সারওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, ২৪ ঘণ্টা বন্যার্তদের তদারকি করা হচ্ছে। কোনো ধরনের খাদ্য কষ্টে যেন তারা না থাকে সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা হবে। বন্যার্তদের বিষয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত হলে বর্ন্যাতদের জন্য তাৎক্ষণিক ১০০ টন চাল ও নগদ ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। দুই এক দিনের মধ্যেই এগুলো বিতরণ করা হবে।

এ দিকে পদ্মা নদীতে গত ২৪ ঘণ্টা তেমন পানি বৃদ্ধি পায়নি। বুধবার বিকালে শূন্য দশমিক ১ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মায় বর্তমানে ১৪ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত দুইদিন ধরে পানি স্থিতিশীল রয়েছে। তাদের ধারণা, পানি আর বৃদ্ধি নাও হতে পারে। তবে প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নেমে যেতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে। গত এক সপ্তাহে এ উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে মেডিকেল টিম বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গতদের খোঁজখবর নিয়েছেন।

এছাড়াও কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কালোয়া, কোমরকান্দি ও কল্যাণপুর ভাঙনের কবলে পড়েছে। শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের ৩০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভেঙ্গে যাওয়া অংশ সিসি ব্লক এবং জিও ব্যাগ ফেলে মেরামতের কাজ শেষ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি কুমারখালী উপজেলার মহেন্দপুর এলাকাতেও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ফসলের পাশাপাশি এসব এলাকার বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে বন্যাকবলিতদের ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন।

ওডি/এসজেএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড