মাহবুব হোসেন, নাটোর
উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ভারি শিল্প কারখানা নাটোরের লালপুর উপজেলার নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস। এই চিরিকলের তিনভাগের একভাগ আখের চাহিদা মিটিয়ে থাকে লালপুর উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী ১৮টি চরের উৎপাদিত আখ। কিন্তু পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় ডুবে গেছে এসব চরের বেশির ভাগ আখক্ষেত। ফলে আখ সংকটে আগামী মাড়াই মৌসুমে মিলটিতে চিনি উৎপাদনে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানায়, উপজেলার পদ্মাতীরবর্তী বিলমাড়িয়া, চরদিয়ারবাহাদুরপুর, দিয়ার শংকরপুর, বন্দোবস্ত গোবিন্দপুর, চর লস্করপুর, নওশারা সুলতানপুর, আরাজি বাকনাই, চাকলা বিনোদপুর, চর লালপুরসহ ১৮টি চরেই শীতকালীন সবজি মূলা, পুঁইশাক, লালশাক, বেগুন, লাউ আখ এবং পেয়ারা উৎপাদন হয়। এর মধ্যে আখ উৎপাদনই হয় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে সৃষ্ট বন্যার কারণে এসব চরের অধিকাংশ এলাকা ডুবে গেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আখ ক্ষেতের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন চর ঘুরে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫শ হেক্টর জমির আখ, এক হেক্টর জমির মূলা, দুই হেক্টর জমির লাল শাক, এক হেক্টর জমিতে বেগুন, এক হেক্টর কলা, এক হেক্টর জমিতে ফুলকপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আখ ক্ষেতের (ছবি: দৈনিক অধিকার)
লালপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চর জাজিরা গ্রামের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটা চরেই অন্তত সাড়ে ৩শ ঘর মানুষের বসবাস রয়েছে। এরা সবাই আখ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তাদের আখ এখন পানির নিচে, ফলে এই এলাকার মানুষ এখন সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
চর জাজিরা গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, আখ উৎপাদনের পর আমরা বাদাম রোপণকরি। কিন্তু আখের জমি সব পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
লালপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক পলাশ বলেন, চরের বেশির ভাগ মানুষ আখের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু আখ ডুবে যাওয়ার কারণে তারা এখন দিশেহারা। এ অবস্থায় সরকারের কাছে তারা কৃষি প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল সূত্র জানায়, আগামী ১ নভেম্বর থেকে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলটি চিনি উৎপাদন শুরু করবে। তিন থেকে চার মাস চলা এই মিলটিতে এবার আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার। যার বেশির ভাগ অথাৎ অন্তত ১ লাখ মেট্রিক টন আখের সরবরাহ আসে ১৮টি চর থেকে। কিন্তু গত কয়েক দিনের বন্যার কারণে বেশির ভাগ আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। যার কারণে সুগার মিলটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আখ সরবরাহ না হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
লালপুরের ৩ হাজার ৭৫০বিঘা জমিতে আখ ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে (ছবি: দৈনিক অধিকার)
নাটোর নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের এজিএম (কৃষি) মাজহারুল ইসলাম জানান, গত দুদিন ধরে তিনি পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আগামী ১ নভেম্বর থেকে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে চিনি উৎপাদন শুরু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রায় ৫শ হেক্টর অর্র্থাৎ ৩ হাজার ৭৫০বিঘা জমিতে আখের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। এ অবস্থার উন্নতি না হলে নতুন নতুন এলাকার আখের জমি প্লাবিত হবে। যার ফলে আগামী চিনি মৌসুমে চিনির উৎপাদন কমে যেতে পারে।
তিনি বলেন, তিন ভাগের এক ভাগ আখ সরবরাহ আসে পদ্মা নদীর বিভিন্ন চর থেকে। কিন্তু বন্যার কারণে আখ ডুবে যাওয়ায় মিলটি আখ সরবরাহ পাবে না। যার কারণে চিনি উৎপাদনও কম হবে। আর চিনি উৎপাদন কম হলে লোকসানের পরিমাণও বাড়বে।
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৮টি চরে মোট ১৬শ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়। এর মধ্যে ৫শ হেক্টর জমির আখ ডুবে গেছে। পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। যার কারণে মিলটি তার চাহিদা অনুযায়ী আখ পাবে না। তবে দু-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হলে কিছুটা অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড