ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মেগচামী ইউনিয়নের মৃধা বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় এক কোটি ৩৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আটজন ব্যবসায়ীর ১৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে।
মধুখালী ফায়ার সার্ভিস জানায়, বুধবার রাতের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃধা বাজারের স্যানিটারি, সিরামিক ও রড সিমেন্টের ব্যবসায়ী আল মদিনা ট্রেডার্সের সৌরভ মোল্যার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শফিকুল আলম মোল্যার ফার্নিচারের কারখানা, আবুল কাইয়ুমের মুদিখানা ও গোডাউন, শাহজাহান মিয়া রাজুর ডেকোরেশন, ফার্নিচার ও গোডাউন, মো. বাচ্চু শেখের পাটের গুদাম, আকাশের রেডিমেড পোশাকের দোকান, ইসহাক মিয়ার ফার্নিচারের কারখানাসহ রাসেল ও সুশান্তের দোকানের সমস্ত মালামাল পুড়ে যায়।
এ দিকে, বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান যন্ত্রপাতি, নতুন মোটরসাইকেল, পাটসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যবসায়ীদের অনেককেই তাদের উপার্জনের অবলম্বন হারিয়ে বিলাপ করতে দেখা যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত শফিউল আলম মোল্যা জানান, রাত ১টার দিকে মৃধা বাজারের টহল পুলিশ প্রথমে বাজারে ধোঁয়া দেখতে পেয়ে আশপাশের লোকজনদের ডেকে তুলে। এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের খবর দেওয়া হয়। প্রায় একই সময় মধুখালী ও বালিয়াকান্দি উপজেলার ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা প্রায় এক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে ব্যবসায়ীসহ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা বিভিন্ন দোকান খুলেও আগুনের উৎস খুঁজে না পেয়ে পাটের গুদামের তালা ভাঙেন। এ সময় গুদামে মজুদকৃত পাটের নিচের দিকে তারা আগুনের বড় কুণ্ডলী দেখেন।
তিনি বলেন, সেখানে কোনো বিদ্যুতের লাইন ছিল না। কীভাবে আগুন লেগেছে তা সঠিক কেউ বলতে পারছেন না। এ সময় আগুনে তার ২৭ লাখ টাকার ফার্নিচারের তিনটি কাটার মেশিনসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে যাওয়া ব্যবাসা প্রতিষ্ঠানে স্থানীয়দের ভিড় (ছবি : দৈনিক অধিকার)
আল মদিনা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সৌরভ মোল্যা জানান, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়ে তিনি ব্যবসা করতেন। সাত বছর আগে পার্শ্ববর্তী জামালপুর বাজারে তাদের পাঁচটি পাটের গুদামে আগুন লেগে সব পুড়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পরেই তার বাবা মারা যান। এখন পুনরায় আবার এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কীভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠবেন তা বুঝতে পারছেন না তিনি।
এ ব্যাপারে মধুখালী উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার টিটব শিকদার জানান, প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পেরেছেন শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে এ আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, টহল পুলিশ রাত ১টা ৪৪ মিনিটে আমাদের ফোন দিয়ে অগ্নিকাণ্ডের খবর জানানোর পর অতি দ্রুত ২টার দিকে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করি। এখানে আমাদের কোনো বিলম্ব হয়নি। তবে, প্রথমে বালিয়াকান্দিতে ফোন দিলে রাস্তা খারাপ থাকায় সেখানকার ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আবারও ঘটনাস্থলে যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এ দিকে, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে মধুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মৃধা বাচ্চু ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা মানোয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে যথাসাধ্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কয়েকজন ব্যবসায়ীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক উল্লেখ করে তারা আরও জানান, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড