কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার চরগোয়ালী খন্দকার নাজির আহমেদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবেন্দ্র চন্দ্র বৈষ্ণব অর্থ আত্মসাতের এক লাখ ৬০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে আরও ২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিল।
দাউদকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কানিজ আফরোজ অর্থ ফেরতের তথ্য দৈনিক অধিকারকে নিশ্চিত করে বলেন, তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।
জানা যায়, গত ৬ জুলাই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী। তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে নানা অনিয়মের বিষয়ে জানতে পারেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের কথা উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে তুলে ধরেন। অভিযোগ ওঠে বহু বছর ধরে চরগোয়ালী খন্দরকার নাজির আহমেদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। জরাজীর্ণ অবস্থান পড়ে আছে বিদ্যালয়ের ভবন। এতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতেও নানা সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের একটি বাজার থাকলেও সেখানে প্রভাবশালীরা দখল করে রাখায় বিদ্যালয়ের কোনো আয় আসছে না।
বিদ্যালয়ের এই নাজুক অবস্থা দেখে উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত করার নিদের্শ দেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কানিজ আফরোজকে। এতে দুটি বিষয়ে তদন্ত করে ৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
উপজেলা চেয়ারম্যানের তদন্তের নির্দেশ পত্র
প্রথমত স্কুল কমিটি ও উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসকে না জানিয়ে ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে স্কুলের আলাদা সিড়ি নির্মাণকাজ তৈরি।
দ্বিতীয় বিদ্যালয়ের একটি নতুন ভবন নির্মাণ অনুমোদন পত্রের জন্য অজ্ঞাত ব্যক্তিকে স্কুলের পক্ষ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন প্রধান শিক্ষক দেবেন্দ্র চন্দ্র বৈষ্ণব। যা স্কুল কমিটির অনুমোদনবিহীন।
এছাড়া আরও উল্লেখ করা হয় প্রধান শিক্ষক তার মনগড়া মতো স্কুল পরিচালনা করে যাচ্ছেন এবং তার সহকারী হিসেবে স্কুল কেরানি মাহফুজুর রহমান এ কাজের সঙ্গে জড়িত। উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। এই অনুলিপি কুমিল্লার জেলা শিক্ষা অফিসার, দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দেন।
পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কানিজ আফরোজ গত ২৫ জুলাই সুন্দরপুর মডেল ইউনিয়নের চরগোয়ালী খন্দকার নাজির আহমেদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। সেখানে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ পরিদর্শন করেন। পাশাপাশি শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা ও লেখাপড়ার খোজখবর নেন।
প্রথম অভিযোগটি সত্য বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করেন উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার কানিজ আফরোজ। তিনি প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেন, তিনি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কমিটির সভায় অনুমোদনবিহীন কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারেন না। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলেও উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার প্রতিবেদন উল্লেখ করেন।
আর দ্বিতীয় বিষয়টিও সত্য প্রমাণিত হয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রধান শিক্ষক প্রাক্তন সভাপতি ও সদস্যদের মৌখিক নির্দেশে বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে শর্ত সাপেক্ষে দিয়েছেন। অফিস সহকারীসহ অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারীরা জিজ্ঞাসাবাদে তা শিকার করেছেন বলেও জানান। পরে ৩ দিনের মধ্যে টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলে প্রধান শিক্ষক টাকা জমা দেন।
এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আওলাদ হোসেন মুন্সীসহ এলাকার প্রভাবশালীদের কারণে কাউকে তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন প্রধান শিক্ষক দেবেন্দ্র চন্দ্র বৈষ্ণব।
এবিষয় দৈনিক অধিকারকে প্রধান শিক্ষক দেবেন্দ্র চন্দ্র বৈষ্ণব বলেন, টাকা ফেরতের বিষয়টি সত্য নয়, সব ষড়যন্ত্র। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন টাকা ফেরত দিয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সব মিথ্যা আমি এসব বিষয় কিছু বলতে পারব না বলে ফোন কেটে দেন।
ওডি/এসএএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড