• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হত্যার পর ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় অপহরণকারীরা

  পাবনা প্রতিনিধি

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:৩৩
গ্রেফতার
গ্রেফতারকৃত দুই আসামি ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের গণিত বিভাগের ছাত্র রাজু আহম্মেদকে (২২) অপহরণ ও হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সিরাজুল ইসলাম (৩৫) ও সামছুলকে (৩৩) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রবিবার (২২ সপ্টেম্বর) ভোরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর এদিন দুপুরে আসামি সিরাজুল ইসলাম ও সামছুল হককে পাবনার আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে।

অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার দত্ত খারুয়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং সামছুলও একই এলাকার সাহেব আলীর ছেলে।

হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সিরাজুল ঋণের টাকায় জর্জরিত হয়ে তা পরিশোধের জন্য টাকা জোগাড় করতেই রাজুকে অপহরণ ও শ্বাসরোধে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।

রাজু আহম্মেদ গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে পাবনা শহরের রাধানগর এলাকার কুবাত ছাত্রাবাস থেকে অপহৃত হন। পরের দিন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার একটি বিল থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। তার পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধমে তাকে দাফন করা হয়। রাজু আহম্মেদ পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপেজলার কল্যাণপুর গ্রামের লোকমান প্রাং-এর ছেলে।

রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পিবিআই জানায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৬টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার রাধানগর এলাকার কুবাত ছাত্রাবাস থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি রাজু আহম্মেদকে কৌশলে ডেকে নিয়ে যায়। ওইদিন রাজু আহম্মেদ ছাত্রাবাসে ফিরে না আসায় তার পরিবারের লোকজন ও তার বন্ধুরা তাকে বিভিনস্থানে খোঁজাখুজি করতে থাকে। পরের দিন বিকালের পর থেকে রাজু আহম্মেদের মোবাইল থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তার মুক্তির জন্য ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।

এরপর ২০ সেপ্টেম্বর রাজু আহম্মেদকে অপহরণ ও চাঁদা দাবির বিষয়টিকে উল্লেখ করে তার পরিবার পাবনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ দিকে মামলাটি পিবিআইয়ের শিডিউলভুক্ত হওয়ায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলার তদন্তভার আসে পিবিআইয়ের ওপর। পাবনার প্রধান অতিরিক্তি পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম এ মামলার তদন্তভার পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ হোসেনকে দেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান, তথ্য-প্রযুক্তি সহায়তায় খুব দ্রুত মামলার রহস্য উদঘাটন করে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। এরপর মূল আসামিকে গ্রেফতারের জন্য একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়। মামলার মূল আসামিকে গ্রেফতার করার জন্য বিভিন্নস্থানে অভিযান চালানো হয়।

এরই অংশ হিসেবে পিবিআইয়ের একটি চৌকস টিম অভিযান চালিয়ে রবিবার রাতে পাবনার ভাঙ্গুড়া রেলস্টেশন এলাকা থেকে মূল আসামি সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন সিমসহ উদ্ধার করা হয়।

সিরাজুল পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, রাজু তার পূর্ব পরিচিত ছিল। ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে সে রাজুর ছাত্রবাসে গিয়ে জানায় তার কিছু পাওনা টাকা আদায় করে দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে যেতে হবে। সে রাজুকে কৌশলে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলস্টেশন এলাকায় নিয়ে যায় এবং সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ছিল তারা। এরপর অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম আবার কৌশল করে রাজুকে জানায় তার (সিরাজুল) বাড়ি যেতে হবে। এরপর রাজুকে তার বাড়ি দত্ত খারুয়া গ্রামে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার রেলস্টেশনে নিয়ে যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে সিরাজুল আরও জানায়, রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে মূল আসামি সিরাজুল ইসলাম পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার সহযোগী নৌকার মাঝি সামছুল প্রাংকে তার নৌকা নিয়ে দিলপাশার রেলস্টেশনের কাছে আসতে বলে। এরপর তারা তিনজন নৌকায় করে সিরাজুলের বাড়ির দিকে রওনা হয়। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নৌকা বিলের মধ্যে ঠেকিয়ে বিশ্রামের কথা বলে। এ সময় রাজু নৌকার মাচালের ওপর ঘুমিয়ে পড়ে।

এ সুযোগে অভিযুক্ত সিরাজুল এবং তার সহযোগী শামছুল নৌকার মাচালের সঙ্গে রাজুর গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেয়। এতে রাজু মারা যান। রাজুর মৃত্যু নিশ্চিত হলে তারা লাশ বিলের পানিতে ফেলে চলে যায়। পরে তারা রাজুর ফোন থেকে সিম কার্ড খুলে নিয়ে মোবাইল ফোনটি পুকুরে ফেলে দেয়। এরপর রাজুর ফোন নম্বর ব্যবহার করে তার বাড়িতে মুক্তিপণের জন্য ফোন করতে থাকে।

পিবিআইয়ের পাবনা জেলা প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত মূল আসামি ঘটনার পর থেকেই কৌশল অবলম্বন করে ভিকটিমকে হত্যা করার পরই মুক্তিপণের টাকা আদায়ের জন্য ভিকটিমের পরিবারের কাছে একাধিকবার ফোন করতে থাকে। অনেক কৌশল অবলম্বন করে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। উভয় আসামি রাজু আহম্মেদকে অপহরণ করে হত্যা করার ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে বলে তিনি জানান।

ওডি/এসএএফ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড