চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রয়াত জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতি ধরে রাখতে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রবর্তক মোড়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ‘রুপালি গিটার’। স্টিলের পাত দিয়ে তৈরি গিটারটির উচ্চতা ১৮ ফুট। নগরীর গোল পাহাড় মোড় থেকে প্রবর্তকের দিকে যাওয়ার পথে গিটারটির সামনের অংশ চোখে পড়ে।
গত বুধবার ( ১৮ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে এ ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এর মধ্য দিয়ে শিল্পীর শৈশব-কৈশরের স্মৃতি বিজড়িত শহরে তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর এক মাস আগে ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করা হলো।
আইয়ুব বাচ্চু বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার খরনা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইশহাক চোধুরী এবং মা নুরজাহান বেগম। তারা তিন ভাই-বোন ছিলেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। আইয়ুব বাচ্চুর মতে, তাদের পরিবারে সবাই অতি ধার্মিক ছিলেন এবং সঙ্গীত নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেওয়াটা কেউ গ্রহণ করেননি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর তার বাবা চট্টগ্রাম শহরের জুবীলি রোড এলাকায় একটি বাড়ি ক্রয় করেন, যেখানে বাচ্চুর বেশিরভাগ কৈশর জীবন অতিবহিত হয়। ১৯৭৩ সালে তার বাবা তাকে তার ১১তম জন্মদিনে একটি গিটার উপহার দেন। তার কৈশর জীবনের শুরুর দিকে সে বিভিন্ন ব্রিটিশ এবং আমেরিকান রক ব্যান্ডের গান শোনা শুরু করে, যেমন তৎকালীন সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রক ব্যান্ড লেড জেপলিন, ডিপ পার্পল, কুইন, দ্য জিমি হেনড্রিক্স এক্সপেরিয়েন্স ইত্যাদি।
তার মধ্যে জিমি হেনড্রিক্সের গিটার বাজানো তাকে বেশি মুগ্ধ করেছিল। তাকে গিটার শেখাতেন জেকব ডায়াজ নামের একজন বার্মিজ নাগরিক। যিনি সেই সময়ে চট্টগ্রামে থাকতেন। ১৯৭৬ সালের দিকে তিনি এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়ে ইলেকট্রিক গিটার বাজাতেন, যা ছিল একটি টিস্কো গিটার। পরে সে যখন গিটারটির প্রতি বেশি আগ্রহ দেখান, তার বন্ধু তাকে টারটি দিয়ে দেয়।
১৯৭৫ সালে তাকে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। ১৯৭৯ সালে সে ওই স্কুল থেকে পাশ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন। চট্টগ্রামে কলেজ জীবনে সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে তিনি একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন। এর নাম ছিল ‘গোল্ডেন বয়েজ’। পরে নাম বদলে করা হয় "আগলি বয়েজ"।
সেই ব্যান্ডের গায়ক ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ এবং আয়ুব বাচ্চু ছিলেন গিটারিস্ট। সেই সময়ে তারা মূলত পটিয়ায় বিভিন্ন বিবাহ অনুষ্ঠানে গান গাইতেন এবং শহরের বিভিন্ন ক্লাবে গান করতেন। ১৯৮০ সালে বাচ্চু ও বিশ্বজিৎ যখন সোলসে যোগদান করে তখন ব্যান্ডটি ভেঙে যায়। ১৯৭৭ সালে তার নিজের ব্যান্ডে কাজ করার পাশাপাশি সে ফিলিংস নামের একটি রক ব্যান্ডে যোগ দেন গিটার বাদক হিসেবে, যেখানে তিনি কাজ করেছিলেন জেমসের সঙ্গে।
পরবর্তী দশ বছর সে সোলসের মূল গিটার বাদক, গীতিকার এবং গায়ক (অনিয়মিত) হিসেবে কাজ করেন। তিন সোলসের সঙ্গে চারটি অ্যালবামে কাজ করেছিলেন, সুপার সোলস (১৯৮২) যা ছিল বাংলাদেশের প্রথম গানের অ্যালবাম, কলেজের করিডোরে (১৯৮৫), মানুষ মাটির কাছাকাছি (১৯৮৭) এই অ্যালবামটিতেই বাচ্চুর সোলসের হয়ে গাওয়া প্রথম গান "হারানো বিকেলের গল্প" প্রকাশ পায়।
১৯৯০ সালের শেষের দিকে বাচ্চু ব্যান্ডটি ছেড়ে নিজের ব্যান্ড লিটল রিভার ব্যান্ড গঠন করেন, যা পরবর্তী সময়ে লাভ রানস ব্লাইন্ড বা সংক্ষেপে এলআরবি নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড