• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জ্ঞান হারানোর আগে রিকশাচালককে যা বলেছিলেন নিহত রিফাত

  অধিকার ডেস্ক

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:০৯
রক্তাক্ত রিফাত
রক্তাক্ত রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান মিন্নি, নতুন প্রকাশিত ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি

বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আরও একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। নতুন ভিডিওটি ধারণ হয় বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিসি ক্যামেরায়। হত্যাকাণ্ডের আড়াই মাস পর নতুন ভিডিও প্রকাশের পর ওই ঘটনা আবার আলোচনায় এসেছে। নিজের স্ত্রীর সঙ্গে নয়, সন্ত্রাসীদের কোপে রক্তাক্ত জখম হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে এক রিকশাচালকের সঙ্গেই নিহত রিফাতের শেষ কথা হয় বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিলেন সেই রিকশাচালক দুলাল। তার বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ফরাজীরপুল এলাকায়।

সাংবাদিকদের রিকশাচালক দুলাল সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, ওইদিন কলেজ সড়কে যাত্রী নিয়ে গিয়ে মানুষের ভিড়ের কারণে আর সামনের যেতে পারছিলেন না। সামনে মারামারি হচ্ছে। দুলাল বলেন, ‘যাত্রী নামিয়ে রিকশা ঘুরাইয়া কেবল দাঁড়াইছি, এ সময় একটা ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় হাইট্টা আইসা আমার রিকশায় উইঠাই কয়, চাচা আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া যান। আমি দেখলাম গলা ও বুকের বামপাশ কোপে কাইট্টা রক্ত বাইর হইতেছে। হের জামাডা টাইন্না আমি গলা ও বুকে চাইপ্পা ধইরা কইলাম, আপনে বহেন, আমি চালাই। এ সময় একটা মেয়ে দৌড়ে রিকশায় উইঠা ওই পোলাডারে ধইর‌্যা বসে। আমি তাড়াতাড়ি রিকশা চালাইয়া হাসপাতালের দিকে যাই।’

‘এক মিনিটের মতো রিফাত ঘাড় সোজা করে বসেছিল, এরপর সে মিন্নির কাঁধে ঢলে পড়ে, আর ঘাড় সোজা করতে পারেনি,’ যোগ করেন দুলাল।

হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢোকার সময় মিন্নি একজন লোককে ডাক দেয় উল্লেখ করে দুলাল আরও জানান, রিকশা থামানের সঙ্গে সঙ্গে ওই লোক দৌড়ে এসে রিফাতের অবস্থা দেখেই স্ট্রেচার আনতে যায়। আমি আর সেই লোক রিফাতকে স্ট্রেচারে তুলে অপারেশন থিয়েটারে দিয়ে আসি। এরপর রিফাতকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ এসে আমার রিকশার ছবি তুলে নেয় ও কাগজপত্র নিয়ে যায়। আমার কাগজপত্র এখনো পুলিশের কাছেই আছে।

হাসপাতাল গেটে মিন্নির ডাকে ছুটে এসেছিলেন যুবদল নেতা হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে ও রিকশাওয়ালা দুলালের বর্ণনামতে রিকশা থামতেই মিন্নির ডাকে সাদা গেঞ্জি পরা এক লোক দৌড়ে স্ট্রেচার এনে রিফাতকে দ্রুত ওটিতে নিয়ে যান। ওই ব্যক্তি আমিনুল ইসলাম মামুন। তিনি বরগুনা জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি একই সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী। মামুনের সঙ্গেও কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

যুবদল নেতা মামুন গণমাধ্যমকে জানান, মিন্নির ডাক শুনেই ছুটে আসি। রিফাতের অবস্থা দেখে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে স্ট্রেচার নিয়ে আসি। এ সময় রিফাত রিকশায় মিন্নির কাঁধে ভর করে বসেছিল। আমি, রিকশাচালক ও মিন্নি তিনজনে মিলে রিফাতকে ধরে স্ট্রেচারে তুলি। দ্রুত তাকে ওটিতে নিয়ে যাই। ডাক্তারের লিখে দেওয়া স্লিপ নিয়ে আমি তিনবার ফার্মেসি থেকে ১৪০০ টাকার ওষুধ কিনে আনি।

রিফাতের শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল জানিয়ে যুবদল নেতা মামুন বলেন, চিকিৎসক কোপের ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়ে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আমি অ্যাম্বুলেন্স গেটে নিয়ে আসি। এর মধ্যেই রিফাতের বন্ধুসহ অন্যরা আসেন। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল নিয়ে যাওয়া হয়। মামুন বলেন, একজন মানুষকে বিপদে সহায়তা করা মানবিক দায়িত্ব, সে যে কেউ হোক। আমিও সেটাই চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আফসোস রিফাতকে বাঁচানো যায়নি।

গত ২৬ জুন রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়।

ওডি/এএস

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড