• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাতভর থানায় দর-কষাকষি, লাখ টাকায় ছাড়া পেল ব্যবসায়ী

  মিরসরাই প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:০৭
এএসআই
অভিযুক্ত এএসআই শওকত আলী (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ফেনসিডিল কারবারি সাজানোর পর মামলার ভয় দেখিয়ে রাতভর দর-কষাকষির এক পর্যায়ে লাখ টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শওকত আলীর বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিয়ে মিরসরাই সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সামছুদ্দিন সালেহ আহমদ চৌধুরীর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন জামশেদ আলম নামে ওই ফার্নিচার ব্যবসায়ী।

লিখিত অভিযোগে ব্যবসায়ী জামশেদ আলম উল্লেখ করেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে করেরহাট ইউনিয়নের ওহিদুর রহমান সুমন আমাকে ফোন দিয়ে শুভপুর ব্রিজে আসতে বলে। পরে বন্ধু নুর হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে আমি সেখানে যাই। এ সময় সেখানে গিয়ে ওহিদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পর সিভিল ড্রেসে জোরারগঞ্জ থানার এএসআই শওকত ও তার সঙ্গে দুই থেকে তিনজন পুলিশ কনস্টেবল আমাদের কাছে আসেন। তারা আমাদের শরীর চেক করে কিছু না পেয়ে ব্রিজের নিচেও চেক করেন। এ সময় তারা ব্রিজের নিচ থেকে ফেনসিডিলের একটি খালি বোতল উপরে নিয়ে আসেন। পরে এএসআই শওকত আমাকে ও নুর হোসেনকে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে থানায় নিয়ে দোতলায় তার কক্ষে নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে এএসআই শওকত আরও একটি বোতলসহ মোট দুইটি ফেনসিডিলের বোতল দিয়ে আমাদের ছবি তোলেন। ছবি তোলার পর ফেনসিডিল কারবারি হিসেবে চালান করে দেওয়ার ভয় দেখান তিনি। এ সময় মামলা থেকে বাঁচতে হলে দুই লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বলেন এএসআই শওকত। পরবর্তীতে পুলিশ এক লাখ টাকায় আমাদের ছাড়তে রাজি হয়। তখন আমার পকেটে থাকা ৪১ হাজার টাকা ও নুর হোসেনের পকেটে থাকা ২৪ হাজার টাকা দিয়ে দেই। পরে পুলিশসহ রাত ১২টার দিকে বারইয়ারহাট পৌর বাজারের মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ থেকে আরও ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে দেই। বাকি ২০ হাজার টাকা আমার আরেক বন্ধু মেজবাহ উদ্দিন মিশুর কাছ থেকে নিয়ে সর্বমোট এক লাখ টাকা এএসআই শওকত আলীকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। টাকা দেওয়ার পর রাত ১টার দিকে সাদা কাগজে আমার ও নুর হোসেনের স্বাক্ষর নিয়ে দুইজনকে ছেড়ে দেয়। যাওয়ার সময় এ বিষয়ে যেন কেউ না জানে তাই পুলিশ আমাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে যায় এবং বলে কাউকে জানালে আমাদের জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

এ দিকে, বারইয়ারহাট পৌর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ এখন মাদকের সঙ্গে জড়িত ক্রেতা ও বিক্রেতা থেকে মাসোহারা নিয়ে শেল্টার দিচ্ছে। অপরদিকে নিজেরাই ইয়াবা-ফেনসিডিল দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছে। পাশাপাশি মাদক মামলা সাজিয়ে হরহামেশাই চাঁদাবাজি করছে। কিন্তু পুলিশের হয়রানির ভয়ে কেউ তাদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতে চায় না। এমন ঘটনা এখন মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানার কিছু অসাধু পুলিশের নিয়মিত চাঁদাবাজির একটি চিত্র।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জোরারগঞ্জ থানার এএসআই শওকত আলী বলেন, ‘জামশেদ আলম ও নুর হোসেন নামে দুইজনকে অনেক রাতে শুভপুর ব্রিজ এলাকায় ঘুরতে দেখে থানায় নিয়ে আসি। এরপর ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলে আবারও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এজন্য কোনো টাকা-পয়সা লেনদেন হয়নি। আমাকে হয়রানি করতে তারা মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’

জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এএসআই শওকতের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শুনেছি। এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারের (মিরসরাই সার্কেল) নিকট একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার থানায় এসে বিষয়টি তদন্ত করছেন।

এ ব্যাপারে মিরসরাই সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সামছুদ্দিন সালেহ আহমদ চৌধুরী জানান, ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা আদায়ের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের পর প্রাথমিকভাবে এএসআই শওকতকে জেলা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে অভিযোগের তদন্ত চলছে, শীঘ্রই তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে। এ সময় অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে এএসআই শওকতের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ওডি/আইএইচএন

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড