• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

৩০ বছর ধরে শিকলবন্দি রতন মিয়া, উদ্ধার করলেন ইউএনও

  কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:২৮
শিকলবন্দি
এভাবেই ৩০ বছর শিকলবন্দি ছিলেন রতন মিয়া (ছবি : সংগৃহীত)

দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় শিকলবন্দি থাকা রতন মিয়াকে উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ সাটিয়াদী গ্রাম থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান তাকে উদ্ধার করেন। এ সময় শিকলবন্দি রতনকে উদ্ধারে সহায়তা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ও সমাজ সেবা কর্মকর্তা।

পরে তাকে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জমির মো. হাসিবুস সাত্তার জানান, রতনের মধ্যে রক্তশূন্যতা রয়েছে। এছাড়া তার শরীরে পুষ্টিরও অভাব আছে। আমরা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব এবং তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করব।

সমাজসেবা অফিসার রুহুল আমিন বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান স্যার ও পাটুয়াভাঙ্গা ইউপির চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিকল ভেঙে রতন মিয়াকে উদ্ধার করা হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি কেবিনে তাকে ভর্তি করা হয়। এ সময় পাকুন্দিয়া সমাজসেবা অধিদপ্তর তার চিকিৎসার সব ধরনের সহযোগিতার চেষ্টা করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

রতন মিয়াকে উদ্ধারের পর উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নেওয়া হচ্ছে (ছবি : দৈনিক অধিকার)

শিকলবন্দি রতনকে উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে পাকুন্দয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান জানান, শিকলবন্দি রতন মিয়ার এই করুণ অবস্থার কথা আমরা জানতাম না। সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পেরেই আমরা তাৎক্ষণিক রতন মিয়া উদ্ধার করেছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রতন মিয়া পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ সাটিয়াদী গ্রামের মৃত আবদুল মোমেনের ছেলে। তাদের তিন ভাই ও এক বোনের সংসার। বাবা-মা ও মেঝো ভাই বেঁচে নেই। প্রায় ২৫ বছর আগে গরু ফসল নষ্ট করাকে কেন্দ্র করে একই এলাকার এক ব্যক্তি তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এরপর থেকেই তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন বলে দাবি তার বড় ভাই আঙ্গুর মিয়ার।

তবে, প্রতিবেশী কয়েকজন বলেন, রতন মিয়া অন্য দশজন মানুষের মতোই সুস্থ ও সবল ছিল। তাকে চিকিৎসা না করিয়ে গোপনে বাড়ির একটি নির্জন আলো-বাতাসহীন কক্ষে শিকলে বেঁধে রাখেন তার এক মাত্র বড় ভাই আঙ্গুর মিয়া। সেই থেকে চলছে তার বন্দি জীবন। লোহার শিকলে বাঁধা অবস্থায় চলতো তার খাওয়া, ঘুমসহ সমস্ত কিছু। এ দীর্ঘ সময়ে তাকে একদিনও চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়নি কোনো হাসপাতালে। এ দিকে, স্বজনদের দাবি তাকে ২৫ বছর আগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। গ্রামের মানুষদের মারধর করতো তাই তাকে শিকলবন্দি করে নির্জনে বেঁধে রাখা হয়েছে।

রতন মিয়াকে কেবিনে ভর্তি করার পর (ছবি : দৈনিক অধিকার)

নাম না প্রকাশ শর্তে এলাকার কয়েকজন জানান, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে ছোট ভাইকে বঞ্চিত করার জন্যই তাকে কৌশলে পাগল বলে বন্দি করে রেখেছিল তার বড় ভাই আঙ্গুর মিয়া। তবে, আঙ্গুর মিয়া তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রতন মানসিক ভারসাম্যহীন। লোকজনের ক্ষতি করতে পারে। এজন্য তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। এলাকার লোকজন অনেক দিন ধরেই জানেন রতন পাগল।

কেউ কেউ বলছেন, প্রায় ২৮ বছর আগে তাদের জমিতে পাশের বাড়ির হযরত আলীর একটি গরু ধান খাচ্ছিল। রতন মিয়া ওই গরুটি ধরে বাড়ি নিয়ে আসছিল। এ সময় হযরত আলী দৌড়ে এসে রতন মিয়ার হাত থেকে গরুটি নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে হযরত আলী লাঠি দিয়ে রতন মিয়ার মাথায় সজোরে আঘাত করে। এতে রতন মিয়ার মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে স্থানীয়ভাবে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর থেকেই রতন মিয়া অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন।

এ দিকে, সাংবাদিকদের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর রতনকে উদ্ধারের পর ইউএনও মো. নাহিদ হাসান জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওডি/আইএইচএন

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড