• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘বিদ্যুৎ এসেছে কিন্তু আমার জীবনের আলো নিভে গেছে’

  মো. আজিজুর রহমান ভূঁঞা

  ময়মনসিংহ

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:৩০
ইলিয়াস নোমান
হাসপাতালের বেডে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ইলিয়াস নোমান (ছবি : দৈনিক অধিকার)

পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় হাত হারিয়ে দুর্বিষহ যন্ত্রণায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পঙ্গু হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন ময়মনসিংহ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য ইলিয়াস নোমান (২৯)। যে বিদ্যুতের জন্য নোমানের হাত হারাতে হলো; সেই বিদ্যুৎ খোদাবক্সপুরে এসেছে ঠিকই কিন্তু চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেলেন তিনি।

আগারগাঁওয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইলিয়াস নোমান বলেন, ‘ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার যশোরা ইউনিয়নের যশোরা গ্রামে আমার নিজের বাড়ি হলেও আমার গ্রামের পাশেই খোদাবক্সপুর গ্রামের অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। তাই পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ এবং খুঁটি দেওয়ার কথা বলে প্রায় এক বছর আগে আমার গ্রামের কয়েকজন যুবক খোদাবক্সপুর গ্রামের ৩০ পরিবারের কাছ থেকে ১০/১২ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়। এরপরেও তারা বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারেনি। ওই গ্রামের লোকজনের অনুরোধে আমি এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা সারোয়ার জাহান ধনুর কাছে বিষয়টি জানতে চাই। এই নিয়ে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নোমান বলেন, গফরগাঁওয়ের যশোরা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম সুমনের নেতৃত্বে ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি সারোয়ার জাহান ধনু, জাকির, ওয়াহিদ, ফয়সালসহ ১৫/২০ জনের একটি গ্রুপ এলাকায় মাদক সেবন ও বেচা-কেনা করে। আমি সব সময় এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করি। কিছুদিন আগে ইয়াবাসহ রেজাউল করিম সুমনের দুই সহযোগী মাদক কারবারি ওয়াহিদ ও সারোয়ার জাহান ধনুর ছেলে আকিবকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এই ঘটনায় সুমন ও ধনু মিয়া আমার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে।

কান্না জড়িত কণ্ঠে ইলিয়াস নোমান বলেন, ওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই আমার জীবনের কাল হলো। আমাকে ওরা হত্যা করতে চেয়েছিল, কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে জানে বেঁচে গেলেও আমি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেলাম। আমার হাত কেটে নেওয়ার পরদিনই খোদাবক্সপুর গ্রামের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে আলো পেলেও আমার জীবনের আলো অনেকটা নিভে গেছে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, নোমান রাজনীতির পাশাপাশি ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের চাচাতো বোনের ছেলে। সেই সঙ্গে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকার নাতি।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইলিয়াস নোমান (ছবি: দৈনিক অদিকার)

এ দিকে, গফরগাঁওয়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় বাম হাত কেটে ফেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইলয়িাস নোমান গুরুতর আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। এ সময় তার চিকিৎসায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ময়মনসিংহ-১০ গফরগাঁও আসনের সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে নোমানের চিকিৎসার খোঁজ নিতে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে যান তিনি। এ সময় অসুস্থ যুবলীগ নেতার চিকিৎসায় সবশেষ অবস্থার খোঁজ-খবর নেন এবং চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সবকিছু করারও আশ্বাস দেন।

এ সময় সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইলিয়াস নোমানের ওপর হামলাকারীরা যে দলেরই হোক না কেন, তাদের দ্রুত গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। গফরগাঁয়ের মাটিতে সন্ত্রাসের কোনো স্থান হবে না।’

প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গফরগাঁও উপজেলার যশোরা গ্রামে নিজ বাড়িতে যাওয়ার সময় যশরা আয়েশা হাসান দাখিল মাদ্রাসা এলাকায় যুবলীগ নেতা সারোয়ার জাহান ধনুর নেতৃত্বে পাঁচ/ছয়জন তাকে কুপিয়ে আহত করে। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত নোমানকে উদ্ধার করে প্রথমে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাতেই ইলিয়াস নোমানের স্ত্রী মাহামুদা আক্তার বাদী হয়ে যশোরা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি রেজাউল করিম সুমন, ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা সারোয়ার জাহান ধনু মিয়াসহ ৯ জনের নামে গফরগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন।

ওই দিনের সেই লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দিয়ে নোমান বলেন, ‘স্থানীয় শিবগঞ্জ বাজার থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলাম। ওই এলাকার একটি বাঁশঝাড়ের কাছে আসার পর পরই আমাকে লক্ষ্য করে ওরা ঢিল ছুঁড়তে থাকে। সেই ঢিলে আমি মোটরবাইক থেকে মাটিতে পড়ে যাই। আর তখনই চাপাতি, রামদা, লোহার পাইপ ও রড দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করতে থাকে। ওদের এলোপাতাড়ি কোপ আমার হাতে-পায়ে ও মুখে লাগে। এরপর সন্ত্রাসী রাকিব, সুমন, ফয়সাল, মাহফুজ, ওলাদসহ ৮-১০ জন চাপাতি ও রামদা দিয়ে আমার সারা শরীরে কোপাতে থাকে। এরপর তারা আমার বাম হাতে রামদা দিয়ে কয়েকটি কোপ দিলে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরে জ্ঞান ফিরে দেখি আমার বাম হাত আর নেই।’

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আতাউর রহমান জানান, ‘আহত ইলিয়াস নোমান এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে সব সময়ই পাশে থাকেন। এছাড়া এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ার পাশাপাশি পল্লী বিদ্যুতের লাইনের সমস্যায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কারণে নোমানের ওপর সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। আমি দ্রুত আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’

এ দিকে, মূল আসামি রেজাউল করিম সুমনসহ অন্যরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন মামলার বাদী আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইলিয়াস নোমানের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার।

গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অনুকূল সরকার জানান, মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি সারোয়ার জাহান ধনু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড