• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রসূতির পেটে গজ রেখে সেলাই, মৃত্যুর পরও মামলা নেয়নি পুলিশ

  সোনারগাঁও প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৫৭
হাসপাতাল
হাসপাতাল (ছবি : দৈনিক অধিকার)

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় ভুল চিকিৎসায় আমান্তিকা নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর দুইদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলা নেননি সোনারগাঁও থানা পুলিশ। তবে, বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করছে বলে জানান থানার ওসি।

জানা গেছে, গত শুক্রবার বিকালে তার স্ত্রী আমান্তিকার প্রসব ব্যথা উঠলে মোগরাপাড়া চৌরাস্তার সোনারগাঁও শপিং কমপেক্সের ৩য় তলায় সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে কর্তব্যরত গাইনি ডাক্তার নুরজাহান তাকে সিজার করতে হবে জানান। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৩ হাজার টাকায় আমান্তিকাকে সিজার করার চুক্তি করেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে অমান্তিকাকে সিজার করেন এবং একটি কন্যা সন্তানের জম্ম দেন। এরপর ডাক্তার নুরজাহার তাড়াহুড়ো করে আরেকটি অপারেশন আছে বলে সাথে থাকা নার্সকে সেলাই করার জন্য নির্দেশ দিয়ে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

এদিকে, সেলাইয়ের পর রাত যত বাড়তে থাকে আমান্তিকার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তার পেট ব্যথাসহ কয়েকবার বমি করেন। পরে হাসপাতালের নার্সরা আমান্তিকা শারীরিক অবস্থার কথা ডা. নুরজাহানকে জানালে তিনি শনিবার সকালে আমান্তিকাকে নারায়ণগঞ্জ কেয়ার হাসপাতালে নিতে বলেন। সেখানে নিয়ে গেলে আমান্তিকাকে দুই দফা অপারেশন করেন নুরজাহান। অপারেশন শেষে আমান্তিকার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে রোগীর স্বজনদের জানানো হয় রোগীর কিডনিতে সমস্যা আছে তাকে দ্রুত ঢাকা আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। শনিবার রাতেই স্বজনরা রোগীকে আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ভুল চিকিৎসায় মৃত আমান্তিকাকে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে বড় সাদিপুর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার মৃত্যুর ঘটনায় আমান্তিকার স্বামী পিন্টু মিয়া সোনারগাঁও থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে, আমান্তিকার মৃত্যুর দুইদিন পেরিয়ে গেলেও সোনারগাঁ থানা পুলিশ এখনো মামলাটি গ্রহণ করেননি বলেন জানান পিন্টু মিয়া। কি কারণে মামলা নিচ্ছেন না তা তিনি জানে না। তিনি আরও জানান, মামলাটি থানায় করার দায়িত্ব দিয়েছেন আরিফ নামের বিশেষ পেশার তার খালু আরিফকে ও তার মামা ফারুককে।

তবে বিশ্বত্ব সূত্রে জানা গেছে, আমান্তিকা মারা যাওয়ার পর থেকে একটি চক্র বিষয়টি ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন। মামলাটি যাতে না হয় সেজন্য আমান্তিকার স্বামী ও পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন বলে অভিযোগ করেছে আমান্তিকার স্বজনরা। তারা জানান, মঙ্গলবার বিকাল থেকে বিশেষ পেশার কিছু লোক আমাদের লোকজনদের বলছে, ‘তোদের রোগী যে মারা গেছে তোরা কিছুই করতে পারবিনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা দিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে ফেলেছে। বাঁচতে চাইলে তোরা আপোষ হয়ে যা।’

পিন্টুর মামা ফারুক জানান, সকালে তারা আমান্তিকা মৃত্যুর ঘটনায় ডা. নুরজাহানসহ কয়েকজনকে আসামি করে সোনারগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করতে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় হাসপাতালের মালিক জয় মিয়া আগে থেকেই ওসির রুমে বসে আছেন। এরপর ঢুকের আওয়ামী লীগ নেতা নিলু কামাল। তারা আমান্তিকার মামা ফারুককে কেন থানায় এসেছে জিজ্ঞেস করে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে আপোষ মীমাংসার কথা বলে। তখন সোনারগাঁও থানার ওসিও তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আপোষ-মীমাংসার কথা বললে ফারুক থানা থেকে বের হয়ে বাড়িতে চলে যান।

আমান্তিকার স্বামী পিন্টু মিয়া জানান, আমার স্ত্রী ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে আমি এ ডাক্তারের শাস্তি চাই। আমি টাকা পয়সা চাইনা, যারা আমার সন্তানটাকে এতিম করে দিয়ে আমি শুধু তাদের শাস্তি চাই। পুলিশ যদি মামলা না নেয়ে আমি আদালতে গিয়ে মামলা করবো।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় দুই পক্ষই হাসপাতালে এসেছে। তারা একটা সমঝোতার চেষ্টা চলেছে।

ওডি/এসজেএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড