• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অচল হয়ে পড়েছে যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ

  যশোর প্রতিনিধি

০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:৪৩
যশোর
যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

স্থবির হয়ে পড়েছে যশোরে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কার্যক্রম। নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের অন্যতম এ সংগঠনটির। কবে নির্বাচন হবে তাও পরিষ্কার নয়। কয়েক দফা তফসিল ঘোষণার পরও হয়নি ভোটগ্রহণ। ফলে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধির হাতে যায়নি নেতৃত্ব। এজন্য ব্যবসায়ীদের ন্যায়সঙ্গত অনেক দাবিও উপেক্ষিত।

২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দুই বছরের জন্যে সংগঠনটির হাল ধরেন। এটাই ছিল সংগঠনটির সর্বশেষ নির্বাচন। তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি একে আজাদের হস্তক্ষেপে নির্বাচিত হওয়ার প্রায় এক বছর পর ২০১২ সালের ৩ মার্চ তারা দায়িত্ব পান। নির্বাচিত ওই কমিটি নতুন ভবনে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।

দুই বছর মেয়াদী কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সংগঠনের বিধি অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল। এ তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহণের দিন ছিল ওই বছরের ১২ জুলাই। কিন্তু সেই নির্বাচন ভেস্তে যায়। তফসিল ঘোষণার দিন একটি মহল তাদের অধীনে নির্বাচন করতে অনীহা প্রকাশ করে নোটিশ বোর্ডে টাঙানো তফসিল ছিঁড়ে নিয়ে যায় এবং কমিটির কোষাধ্যক্ষ শামীম আহমদকে অপমান করেন। পরে তিনি স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর মিজানুর রহমান খান কমিটির মেয়াদের শেষ দিন ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে দেখা করে প্রশাসনের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ওই দিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন প্রশাসকের দায়িত্ব নেন। তিনি ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে দুই দফা তফসিল ঘোষণা করলেও মামলার কারণে নির্বাচন হতে পারেনি।

২০১৫ সালের ১৬ মে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল আরিফকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করে তফসিল ঘোষণা করা হয়। এ নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের একাংশ মামলা দায়ের করেন। এতে ভোটের আগের দিন নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর আবারও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক এটিএম গোলাম মাহবুবকে চেয়ারম্যান করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ভোট গ্রহণের দিন ছিল ২৮ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসাদুল হক। এরপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হুসাইন শওকত।

মূলত দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা যশোর চেম্বারের নেতা নির্বাচন করেন। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ছাড়াও অর্থনৈতিক নানা কর্মকাণ্ডের সংগঠনটি ভূমিকা রাখে। আমদানি-রপ্তানি, বাণিজ্য, ঠিকাদারি কাজ ছাড়াও অন্যান্য ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চেম্বার সনদ প্রদান করে থাকে। নির্বাচন না হওয়ায় অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে যশোরের ব্যবসায়ীরা। চরম ক্ষোভ আর হতাশা বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।

দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত এফবিসিসিআই নির্বাচনে যশোর চেম্বার অব কমার্স থেকে ছয়জনকে কাউন্সিলর করা হয়। সেখানে সংগঠনটির একটি মহল ক্ষমতার বলে নিজেরাই কাউন্সিলর হয়ে এফবিসিসিআই নির্বাচনে যান। অথচ নিয়ম রয়েছে কাউন্সিলর বা ভোটার হতে হলে প্রশাসক বরাবর আবেদন করতে হয়। তিনি যাদের মনোনীত করবেন কেবলমাত্র তারাই কাউন্সিলর হতে পারবেন। এ নিয়ম কার্যকর না থাকায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ।

এদিকে দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় যশোর চেম্বার অব কমার্সে দেখা দিয়েছে চরম অচলাবস্থা।

এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্যবসায়ীদের সুখ-দুঃখ ব্যবসায়ীরাই বুঝবে। তাই দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক। আমরা সেখানে আমাদের সুখ-দুঃখ সুবিধা-অসুবিধার কথা জানাতে পারব।

সংগঠনটির সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা মুরাদ আলী জানান, চেম্বারের সদস্য সাড়ে ৯ হাজার। এর মধ্যে নবায়নকৃত সদস্য সংখ্যা এক হাজার ৪৭৪ । নবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এ ব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সর্বশেষ নির্বাচিত সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, আমরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে নতুন নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করি। কিন্তু ব্যবসায়ীদের একটি অংশ মামলা করেন। যে কারণে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু নতুন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে না। ফলে চেম্বারের কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আমরা যশোর চেম্বারের নির্বাচন দাবি করছি।

যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, আমি নতুন এসেছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ওডি/এসজেএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড