• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধর্ষণের মামলা না নিয়ে থানায় গৃহবধূকে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ

  সারাদেশ ডেস্ক

০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০৩
ওসি
(ছবি : ইন্টারনেট)

গণধর্ষণের শিকার ৩ সন্তানের জননী এক গৃহবধূ থানায় গিয়েছিলেন মামলা করতে। কিন্তু ওই গৃহবধূর মামলা নেয়নি পুলিশ। উল্টো গণধর্ষণে অংশ নেওয়া পাঁচজনের মধ্যে থেকে একজনের সাথে জোরপূর্বক থানায়ই নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর বিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ওই গৃহবধূর স্বামী রয়েছে। তার স্বামীর অনুমতিও নেওয়া হয়নি। ধর্ষিত গৃহবধূর কোনো কথা শোনা হয়নি। এমনই অভিযোগ করেছেন গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ ও নির্যাতিতার বাবা।

তবে, এ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পুলিশ। পুলিশ বলছেন, ধর্ষকের সাথে বিয়ে হয়েছে, তবে থানায় নয়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতায় এই বিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের তরফ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পাবনা সদর থানায়।

এ ঘটনাটি নিয়ে পাবনার জনসাধারণ ও নাগরিক সমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ওই গৃহবধূর লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাপুর যশোদল গ্রামে ওই নারী স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিল। গত ২৯ আগষ্ট রাতে একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদ চার সহযোগীকে নিয়ে ওই নারীকে কৌশলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। টানা কয়েকদিন ধর্ষণের পর নির্যাতিতা গৃহবধূ কৌশলে পালিয়ে স্বজনদের বিষয়টি জানালে তারা গত ৫ সেপ্টেম্বর পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে গৃহবধূর নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ রাসেলকে আটক করে। তবে বিষয়টি মামলা হিসেবে থানা পুলিশ এজাহারভুক্ত না করে স্থানীয় একটি চক্রের মধ্যস্থতায় পূর্বের স্বামীকে তালাক দিয়ে ধর্ষক রাসেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ঘটনাটি নিষ্পত্তির চেষ্টা করে।

নির্যাতিত গৃহবধূ বলেন, ‘রাসেলকে আটক করে আনার পর ওসি স্যার নিজেই থানায় কাজী ডেকে এনে আমাদের বিয়ে দিয়েছেন।’

নির্য়াতনের শিকার ওই গৃহবধূর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে অপহৃত হওয়ার কয়েকদিন পর তাকে খুঁজে পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার কাছে ঘটনার বিস্তারিত শুনে থানায় অভিযোগ দেই। পুলিশ আমাদের অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে মেয়েকে থানা হেফাজতে রেখে আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরে জানতে পারি থানায় রাসেলের সাথে তার বিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বামী সন্তান থাকা অবস্থায় রাসেলের সাথে তাকে কিভাবে বিয়ে দেওয়া সম্ভব তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ ঘটনায় আমরা সামাজিকভাবে অপদস্থ হয়েছি। আমরা ধর্ষকদের বিচার চাই।’

দাপুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য দৌলত আলী বলেন, ‘গণধর্ষণের অভিযোগে সদর থানার উপপরিদর্শক একরামুল হক আমার উপস্থিতিতে রাসেলকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরে শুনি থানায় তাদের বিয়ে হয়েছে। এই বিয়ে কোনোভাবেই শরিয়ত সম্মত নয়।’

একাধিক এলাকাবাসী ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘স্বামী ও তিন সন্তান থাকা অবস্থায় থানা পুলিশ কী করে একই সময়ে তালাক ও বিয়ে দিল। ৫ জন ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও একজনের সাথে কিভাবে বিয়ে দিল পুলিশ প্রশ্ন গ্রামবাসীর। তারা ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন।’

গণধর্ষণে অভিযোগে অভিযুক্ত রাসেল আহমেদ বলেন, ‘আমি ধর্ষণের সাথে জড়িত নই, আমাকে পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে মামলা ও রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। থানায় আমাদের বিয়ের সময় এসআই একরাম আমাদের ছবিও তোলেন।’

এ বিষয়টি অস্বীকার করে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক বলেন, ওই গৃহবধূ প্রথমে ধর্ষণের অভিযোগ দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন। ওই দিন রাতে তাদের বিয়ের কথা শুনেছি, তবে তা থানায় কোনো বিয়ের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের এর সাথে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

এ ব্যাপারে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি যেহেতু জানতে পেরেছি, খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান। তবে ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় নিয়ম নীতিতে এই ধরনের বিবাহের বৈধতা আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পাবনার মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার জলি বলেন, ‘ধর্ষণের বিচার না করে বিয়ে দেওয়া সামাজিক মীমাংসার নামে প্রহসন। থানায় এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি দুজনের সম্মতিতেও বিয়ে হয়ে থাকে, তাতে তো ধর্ষককে উৎসাহিত করা হলো। যদি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে এর সাথে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।’

ওডি/টিএএফ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড