ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহবাসীর বহুল প্রত্যাশিত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের প্রাণ ফেরাতে খনন প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কাজ (ড্রেজিং) শুরু করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ময়মনসিংহ-জামালপুর থেকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পর্যন্ত পুরনো এ ব্রহ্মপুত্র নদের খনন করা হবে প্রায় ২২৭ কিলোমিটার এলাকা। এ প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
এক সময়ের খরস্রোতা এশিয়া মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘতম নদ পুরনো ব্রহ্মপুত্র খননে প্রথম পর্যায়ে ৯০ কিলোমিটার এলাকায় পরীক্ষামূলক ড্রেজিং কাজের অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ শহরতলীর চর নিলক্ষীয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওটিবিএলের ড্রেজার দিয়ে টেস্টিং কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যেই ২৫টি ড্রেজার দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পরীক্ষামূলক খনন কাজ শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলক খনন কাজ শেষ হলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে পুরোদমে এ কার্যক্রম শুরু হবে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর নদটির নাব্যতা ফেরাতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় দুই হাজার ৭৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকায় নদের ২২৭ কিলোমিটার এলাকার ড্রেজিং কাজ করার অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। পরে ২০১৮ সালের ২ নভেম্বরে ময়মনসিংহ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ খনন প্রকল্পের ভিত্তি নাম ফলক উন্মোচন করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী মাসের শুরুতে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য সচিববৃন্দ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরই পুরোদমে চলবে এ খনন কার্যক্রম।
সরেজমিনে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকালে ময়মনসিংহের চর নিলক্ষীয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদে খনন কাজ (ট্রায়াল ড্রেজিং) শুরু হয়েছে। ১০০ মিটার প্রস্থ ও গড়ে তিন মিটার গভীর করে নদের খনন করা হচ্ছে। এর আগে গত শনিবার (২৪ আগস্ট) থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে এ কাজ শুরু করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আটটি প্যাকেজের মাধ্যমে ২৮টি ড্রেজার দিয়ে বর্তমানে এ খনন কাজ চলছে। নদের ২২৭ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য দুই হাজার ৭৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ড্রেজিং করার পর ব্রহ্মপুত্র নদ প্রশস্ত হবে ১০০ মিটার। এছাড়া গভীরতা এমন করা হবে, যাতে শুকনো মৌসুমে নদের তলদেশে কমপক্ষে ১০ ফুট পানি থাকে।
ব্রহ্মপুত্র নদের ২২৭ কিলোমিটার খননে মোট ৮.৮ কোটি ঘন মিটার মাটি উত্তোলন করা হবে। সারা বছরব্যাপী পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযানসমূহের নির্বিঘ্ন ও নিরাপদে চলাচল নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ বৃদ্ধিসহ কৃষি ও মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে সহায়তা করার লক্ষ্যে এ ড্রেজিং কাজ শুরু করা হয়েছে। এ ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন হলে জামালপুর ইপিজেডের অধিকাংশ মালামাল ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে পরিবহন করা যাবে।
ফলে এই নৌ-পথ দিয়ে আসাম থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারি হয়ে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ-ময়মনসিংহ-টোক-ভৈরব-চাঁদপুর-বরিশাল-মোংলা-আংটিহারা হয়ে ভারতের কলকাতার হলদিয়া সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত পাঁচ হাজার টন ওজনের পণ্যবাহী কার্গো চলাচল করতে পারবে। সেই সঙ্গে পর্যটনবাহী ছোট ছোট জাহাজও চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মিজোরাম, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে খুব সহজে ও কম খরচে যাত্রীসহ পণ্য পরিবহন করতে পারবে। একইভাবে নদে বৃষ্টির পানিও ধরে রাখা সম্ভব হবে।
সারা বছর পানি প্রবাহ থাকলে মিঠা পানিতে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছের উৎপাদন বাড়বে। নদের আশপাশে সারা বছর সেচ সুবিধা পাবে কৃষক। এমনকি নদপাড়ের মানুষ বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষাসহ এই নদ থেকে নানা সুফল পাবে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলার প্রায় দুই কোটি মানুষ।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ-এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ডেইজিং প্রকল্প পরিচালক রকিবুল ইসলাম তালুকদার জানান, ‘পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার’ নামের এ প্রকল্পের মধ্যে দুই হাজার ৭৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ২২৭ কিলোমিটার ড্রেজিং কাজের পুরো প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রথম পর্যায়ে কিশোরগঞ্জের টোক থেকে ৯০ কিলোমিটারে আটটি প্যাকেজে ড্রেজিং করা হচ্ছে। বাকিটুকুর জন্য দুই-এক মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে। ব্রহ্মপুত্রকে আবারও প্রাণ ফিরিয়ে দিতেই এই কার্যক্রম।
প্রকল্প পরিচালক রকিবুল ইসলাম তালুকদার বলেন, খনন কাজ শুরু করেছেন আটটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় খননের জন্য বর্তমানে ২৫টি খননযন্ত্র ব্রহ্মপুত্র নদে অবস্থান করছে। প্রথম দফায় ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা থেকে কিশোরগঞ্জের টোক পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার অংশে এ খননকাজ করা হবে। অবশিষ্ট বাকি কাজ হবে দ্বিতীয় দফায়। ব্রহ্মপুত্র খননের প্রয়োজনে উচ্ছেদের কাজও করা হবে। এছাড়া খননকাজ শেষে আরও তিন বছর নদটির খননকাজের দেখভাল করা হবে। এ সময় ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড