• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নওগাঁয় গৃহহীন হতদরিদ্রদের দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি দিচ্ছে সরকার

  কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ

৩০ আগস্ট ২০১৯, ০৯:০৩
দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি
হতদরিদ্রদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি (ছবি: দৈনিক অধিকার)

নওগাঁয় প্রথমবারের মতো দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণায়নের কাবিটা ও টিআর কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থে মানবিক সহায়তায় কর্মসূচির আওতায় নওগাঁর ১১ উপজেলার অসচ্ছল, হতদরিদ্র, নদী ভাঙনসহ বিভিন্ন দুর্যোগে গৃহহীন পরিবার, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত মহিলা, প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ ২১১টি পরিবার মধ্যে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।

নওগাঁ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, নওগাঁ সদর উপজেলায় ২০টি, পোরশা উপজেলায় ২৪টি, সাপাহার উপজেলায় ২৩টি, নিয়ামতপুর উপজেলায় ২২টি, পত্নীতলা উপজেলায় ২১টি, ধামইরহাট উপজেলায় ১৯টি, বদলগাছী উপজেলায় ১৭টি, মহাদেবপুর উপজেলায় ১৮টি, মান্দা উপজেলায় ১৭টি, রানীনগর উপজেলায় ১৫টি ও আত্রাই উপজেলায় ১৫টিসহ সর্বমোট ২১১টি বাড়ি নির্মাণ কাজ চলছে।

বাড়িগুলোর ইটের গাঁথুনি দিয়ে হবে, কাঠের দরজা-জানালা, অত্যাধুনিক রঙিন টিনের ছাউনি, ১০ ফিট লম্বা ও ১০ ফিট আয়তনের ২ কক্ষ বিশিষ্ট, একটি রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্বত স্যানিটারি ল্যাট্রিন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানের দুর্যোগ প্রতিরোধী এমন বাড়ি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রত্যেকটি বাড়ি নির্মাণে সরকারের খরচ ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩১ টাকা।

প্রত্যেকটি বাড়ি নির্মাণে সরকারের খরচ ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩১ টাকা (ছবি: দৈনিক অধিকার)

নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের নামানুরপুর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী আলেয়া বেওয়া (৫০) বলেন, নিজের সামান্য জমি থাকলেও ঘর বানানোর সামর্থ্য নাই। বেঁচে আছি প্রতিবন্ধী ভাতা আর গ্রামের মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে। জন্ম থেকেই ঝুপড়ির মধ্যে বসবাস করে আসছি। সরকারি খরচে দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি পেলে শেষ জীবনটা হবে সুখের, নতুন বাড়িতে ভালোভাবে থাকতে পারব।

একই ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের ভিক্ষুক আব্দুল জব্বার (৭৫) বলেন, অনেকদিন আশ্রয়হীন ছিলাম, ভিক্ষা করে দিন কাটত। ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বৃদ্ধ হয়েছি। বয়সের ভাড়ে এখন আর চলতে পারি না। মানুষের দয়া আর দানের ওপর কোনো মতে বেঁচে আছি। সরকারের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় আমার সামান্য জমিতে নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে, শেষ বয়সে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালোভাবে দিন কাটাতে পারব।

নওগাঁর পোরশা উপজেলা সদরের নিতপুর গ্রামের ছিন্নমূল বাদাম বিক্রেতা ফিটি (৭০) বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রী কুড়িয়ে বিক্রি করা সামান্য টাকা আর বাদাম বিক্রি করে আমার দিন চলে। সংসারে আপন বলে কেউ নেই। কোনো রকমে টিনের ছাপড়ার নিচে বসবাস করছি। বৃষ্টিতে ভিজে, প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে কনকনে শীতে না ঘুমিয়ে জীবন যাপন করে আসছি। পৈত্রিক সূত্রে সামান্য জমি আছে। কিন্তু ঘর বানানোর সামর্থ্য নেই। সরকারি টাকায় পিআইও অফিস ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। এটাই আমার কাছে রাজপ্রাসাদ।

নওগাঁর মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের বাঙ্গালপাড়ার আব্দুল গফুর সরদার (৬০), রানীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের হরিষপুর গ্রামের লতিফুল বেওয়া (৬৫), আতাইকুলা গ্রামের আম্বিয়া বেওয়া (৬৫) ও খট্টেশ্বর ইউনিয়নের পরিশচম বালুভরা গ্রামের ফরিদা বিবি (৫২) দুর্যোগ সহনীয় ঘর পেয়েছেন।

তারা বলেন, কোনো দিন পাকা ঘরে থাকার স্বপ্নও তারা দেখেননি। কিন্তু বর্তমান সরকারের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় তারা পাকা ঘর পেয়ে বেজায় খুশি। তাদের সামান্য জমিতে সরকার ঘর করে দেওয়ায় স্থায়ী আশ্রয় পেয়েছেন বলে জানান।

নওগাঁ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে নওগাঁ জেলার ১১ উপজেলায় ২১১টি পরিবারের মধ্যে দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি করে দিচ্ছে সরকার। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শুরু হয়েছিল। যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ৪১ টাকা। স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও রান্নাঘর সুবিধাসহ এসব বাড়ি বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত প্রতিরোধে সক্ষম।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হতদরিদ্রদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিনব ও চমৎকার একটি কর্মসূচি। দরিদ্রতা থেকে উত্তোরণের জন্য এবং হতদরিদ্র মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

আর এ কারণে সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণায়য়ের কাবিটা ও টিআর কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থে এই ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কর্মসূচিতে গ্রামের অসচ্ছল, হতদরিদ্র, ঘরহীন, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত মহিলা, প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা বিনামূল্যে পাবে দুর্যোগ সহনীয় ঘর পাবে। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, গ্রামের এই পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করা।

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সম্মলিতভাবে এ কর্মসূচি সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। নওগাঁর ১১টি উপজেলায় বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে গৃহহীনদের দুর্যোগ সহনীয় ২১১টি বাড়ি দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। অতি শীঘ্রই তাদের বাড়ি হস্তান্তর করা হবে।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড