• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ব্যবসার লোকসান পোষাতে ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড

  রাকিব হোসেন আপ্র, লক্ষ্মীপুর

২৯ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৫১
লক্ষ্মীপুর
ছবি : জেলার মানচিত্র

টাকার নেশায় উন্মাদ হওয়া এক যুবক তার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ভয়ঙ্কর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা রঙিন কোমল পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পান করানোর পর চলন্ত সিএনজিতে গলাকেটে ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করে। ঘটনার পরদিন খুনি যুবক আটক হলেও পলাতক রয়েছে তার সহযোগী বন্ধু। খুনিদের ভাড়া খাটায় ফেঁসে গেছে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. সাগর। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উদঘাটন করেছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম বটতলী গ্রামের সিদ্দিক উল্যাহ ব্যাপারীর ছেলে মেহেদী হাসান রুবেল ওরফে হাশেম। তার বন্ধু একই গ্রামের আবদুল হক ব্যাপারি প্রকাশে কাঁঠালিয়া বাড়ির আবদুল্যাহর ছেলে ফয়েজ আহমেদ সুমন ওরফে ফয়েজ। সম্প্রতি তাদের দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হাশেম দীর্ঘদিন ধরে তার বাবার সুপারি ব্যবসা দেখাশুনা করছে। শুরুতে সব ঠিকঠাক থাকলেও পরবর্তীতে তিনি মোবাইলে তিন পাত্তি গেইম, জুয়া খেলা ও নেশায় জড়িয়ে পড়ে ব্যবসার লাখ লাখ টাকা নষ্ট করে। এক পর্যায়ে ব্যবসার লোকসান, পাওনাদারদের চাপ থেকে মুক্তি পেতে টাকার নেশায় উন্মাদ হয়ে ওঠে হাশেম। অন্যদিকে হাশেমের বন্ধু ফয়েজ এক বখাটে ছেলে। স্থানীয়রা বলছে, সে একাধিক সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলের সঙ্গে কাজ করেছে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোক্তার হোসেন বলেন, গত বুধবার (২১ আগস্ট) লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কাজির দিঘীরপাড় বাজার সংলগ্ন ভূঁইয়া বাড়ির একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে ব্যবসায়ী আলমগীরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত আলমগীর (৪৫) রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের সাইছা গ্রামের মৃত বশির উল্যাহর ছেলে এবং রায়পুর পৌর শহরের তানহা কম্পিউটার দোকানের স্বত্ত্বাধিকারী। এ ঘটনায় ওই দিনই নিহতের ভাই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আসামি হাশেম ও ফয়েজ (ছবি- দৈনিক অধিকার)

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, মামলার সূত্র ধরে মেহেদী হাসান রুবেল ওরফে হাশেম (২৮) ও মো. সাগর (২০) নামে দুইজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা হত্যাকাণ্ডের সত্যতা স্বীকার করে। পরে আলামত হিসেবে একটি সিএনজি ও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকালে বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল কাদের-এর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ব্যবসায়ী আলমগীর হত্যার লোমহর্ষক বিবরণ দেয় হত্যা মামলার গ্রেফতারকৃত দুই আসামি।

আদালতের বরাত দিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, পাওনা টাকার জন্য গত মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় মান্দারী বাজারে দেনাদার মেহেদী হাসান রুবেল ওরফে হাশেমের সঙ্গে দেখা করেন ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন। একটি কনফেকশনারিতে বসে তাদের মধ্যে লেনদেন নিয়ে কথাবার্তা হয়। এ সময় হাশেমের বন্ধু ফয়েজ আহমেদ সুমন ওরফে ফয়েজ উপস্থিত ছিল। তারা দুই বন্ধু পরিকল্পিতভাবে দেনা ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করার পর হালকা আপ্যায়ন হিসেবে ঘুমের ওষুধ মেশানো রঙিন কোমল পানীয় ব্যবসায়ী আলমগীরকে খাইয়ে দেয়। এরপর আরও ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করবে বলে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাড়া করে আলমগীরকে নিয়ে একাধিক স্থানে যায়।

পুলিশ বলছে, তারা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে সময় নষ্ট করছিল। যাতে ঔষুধের প্রভাবে ব্যবসায়ী আলমগীর ঘুমিয়ে পড়ে। তারা চেয়েছিল মেঘনা নদীর মাঝখানে একটি চরে আলমগীরকে হত্যা করে ফেলে আসবে। কিন্তু নৌকার মাঝি রাজি হয়নি বলে তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরে প্রায় অচেতন আলমগীরকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সেই ভাড়া সিএনজিতে করে রওনা দেয় তারা। সিএনজি অটোরিকশার পেছনের সিটে দুই পাশে ছিল হাশেম ও ফয়েজ আর মধ্যখানে ছিল ব্যবসায়ী আলমগীর। দালালবাজার-মীরগঞ্জ সড়কে পৌঁছালে চলন্ত সিএনজি অটোরিকশায় গলাকেটে ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আলমগীরকে হত্যা করে ওই দুই বন্ধু। পরে সেই তিন লাখ টাকা উদ্ধার করে লাশটি কাজির দিঘীরপাড়ের একটি পরিত্যক্ত পুকুরে ফেলে দেয় তারা।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ওই তিন লাখ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ফয়েজ আহমেদ সুমন ওরফে ফয়েজ সেই রাতেই পালিয়ে যায়। বাকি দুই লাখ টাকা অন্য এক পাওনাদারকে পরিশোধ করে ৫০ হাজার টাকা নিজের কাছে রাখে হাশেম।

হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর গ্রেফতারকৃত দুই আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। পলাতক আসামি ফয়েজ আহমেদ সুমন ওরফে ফয়েজকে গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

ওডি/এসএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড