মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, বান্দরবান
বান্দরবানের পাহাড়ে কৃষকদের উৎপাদিত সুস্বাদু ফলের নাম বাতাবি লেবু বা জাম্বুরা। বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালি চাষিদের বাগানে চলতি মৌসুমে জাম্বুরা ফলন হয়েছে অন্যান্য বছরে তুলনায় দ্বিগুণ। জেলার অনেক স্থানে এই মৌসুমি ফল বিক্রি করে অনেক পরিবারের মধ্যে এসেছে সচ্ছলতা। তবে সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে দ্বিগুণ লেবু ফলিয়েও দাম পাচ্ছেন না চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে অন্যতম বান্দরবান পার্বত্য জেলায় জাম্বুরার বাগান ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বর্তমানে চলছে জাম্বুরার ভরা মৌসুম। বান্দরবান জেলা শহরে থেকে ১৮ কিলোমিটার ভেতরে দুর্গম গ্রাম লাপাইমুখ ও লাপাই উজানি পাড়া। এ পাড়ার ঘরে ঘরে রয়েছে অন্যান্য ফলজ গাছের সঙ্গে সহযোগী ফলগাছ হিসেবে জাম্বুরা গাছ।
পাহাড়িদের এ দুটি গ্রামের মারমা উপজাতীয় পরিবারগুলো মৌসুম ভিত্তিক অর্থকরী ফল হিসেবে ঘরের আঙিনা বা বাগানের গাছ থেকেই সংগ্রহ করেন পাকা জাম্বুরা। পাকা জাম্বুরা বেশিদিন রাখা যায় না, কারণ ভেতরে পচন ধরে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফড়িয়ারা গ্রামগঞ্জ থেকেই কমদামে বাগিয়ে নেয় মিষ্টি-টক জাম্বুরা। এ কারণে প্রতি বছর এ জেলায় জাম্বুরার বাম্পার ফলন হলেও বরাবরই ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত থাকেন চাষিরা।
বান্দরবানের উপজাতিসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কৃষকরা জাম্বুরা চাষের দিকে ঝুঁকছে (ছবি : দৈনিক অধিকার)
সদর উপজেলার দুই নম্বর কুহালং ইউনিয়নের চেমি ডলুপাড়া গ্রামের জাম্বুরা চাষি হ্লাপুচু মারমা ও চ্যউগ্য মারমা জানিয়েছেন, বড় সাইজের একশ জাম্বুরা গড়ে ৫শ টাকা এবং মাঝারি সাইজের জাম্বুরা একশটি ৪শ টাকা হারে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে। বাগান কিংবা বাড়ির আঙিনা থেকেই ফড়িয়ারা কিনে নিচ্ছে এ দামে জাম্বুরা।
এলাকার চাষিরা জানান, একটি জাম্বুরা চারা লাগানোর ছয় বছরের মাথায় গাছে ফল আসে। এভাবে লাগাতার ১৫ বছর পর্যন্ত মৌসুম ভিত্তিক প্রতিটি গাছে বড় আকারের জাম্বুরা পাওয়া যায় গড়ে ৪শটি করে। ১৫ বছর পার থেকে পরবর্তী ৩০ বছর পর্যন্ত গাছে জাম্বুরার ফলন কমতে থাকে এবং সাইজেও ছোট আকার হয়। প্রতিটি জাম্বুরা গাছ থেকে ছয় বছর থেকে গড়ে ৪শ জাম্বুরা উৎপন্ন হয়। এ হিসেবে প্রতিটি গাছ থেকে উৎপাদিত জাম্বুরার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৬শ টাকা হারে।
চেমি ডলুপাড়া ও লাপাইমুখ গ্রামের বেশকিছু পরিবার প্রতি বছরই তাদের বাগানে জাম্বুরার আবাদ বৃদ্ধি করছেন। জেলা শহরের বালাঘাটার লেমুঝিরি আগা পাড়ায় ফলদ গাছগুলোর বেশির ভাগই হচ্ছে জাম্বুরা গাছ।
এ দিকে জেলার প্রতি গ্রামেই বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবছর গড়ে ৩০/৪০ একরের ভূমিতে জাম্বুরার চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পাহাড়ি জাম্বুরার চাহিদা রয়েছে দেশের সর্বত্রই। পাহাড়ের মাটি জাম্বুরা চাষের উপযোগী ও আবহাওয়াও সহনশীল।
সংরক্ষণাগারের অভাবে দ্বিগুণ জাম্বুরা ফলিয়েও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না চাষিরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)
জেলায় কী পরিমাণ জমিতে জাম্বুরার আবাদ হয়েছে তার সঠিক হিসাব জানা নেই কোনো মহলেরই। তবে চাষিরা দাবি করেন, জেলায় প্রায় ৪ হাজার একর জমিতে জাম্বুরার চাষ হচ্ছে। এসব জমিতে থাকা গাছ থেকে প্রতি বছরই কয়েক লাখ জাম্বুরা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। বান্দরবানের গ্রামাঞ্চলে উৎপাদিত জাম্বুরা খেতে মিষ্টি-টক ও সাদা-লাল রংয়ের। পাহাড়ের জাম্বুরার চাহিদা সারাদেশেই রয়েছে। এ জন্যে এখানকার চাষিরা ক্রমেই ঝুঁকে পড়ছে অর্থকরী ফলদ পণ্য হিসেবে জাম্বুরা বাগানের দিকে।
এ বিষয়ে বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক দৈনিক অধিকারকে বলেন, বান্দরবানে চলতি মৌসুমে জাম্বুরার ফলন হয়েছে অন্যান্য বছরে তুলনায় অনেক বেশি। আমাদের কৃষি বিভাগ হতে কৃষকদের দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির জাম্বুরা চারা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বান্দরবানের উপজাতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কৃষকরা জাম্বুরা চাষের দিকে ঝুঁকছে।
তিনি বলেন, বান্দরবান সদর উপজেলার ১৩০ একরসহ জেলার সাতটি উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার একরের মতো জাম্বুরা বাগান চাষ হয়েছে। তবে বড় সমস্যা হচ্ছে কাঁচা পণ্য সংরক্ষণে বান্দরবান জেলার কোথাও হিমাগার নাই ও পাহাড়ি এলাকার যোগাযোগের দুর্গমতার কারণে সঠিক সময়ে বাজারজাত নিয়ে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চাষিরা।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড