• বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

টাঙ্গাইলে ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

  টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

২৭ আগস্ট ২০১৯, ২২:৫৩
জেলার ম্যাপ
ছবি : দৈনিক অধিকার

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল হাকিম ও খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) মো. নজরুল ইসলামসহ গুদাম কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারি ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও উপজেলা খাদ্য বিভাগ ও গুদাম কর্মকর্তারা ধান ব্যবসায়ী ও দালালদের সঙ্গে যোগসাজশ করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় করেছেন।

জানা যায়, উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রথম দফায় ৩১৭ মেট্রিক টন এবং দ্বিতীয় দফায় ৫২৮ মেট্রিক টনসহ মোট ৮৪৫ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। কৃষকদের কাছ থেকে চিটা ও ময়লামুক্ত ১৪ ভাগ আদ্রতার ধান সংগ্রহ করে সংরক্ষণের বিধিবিধান থাকলেও খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় তা মানা হয়নি। স্থানীয় সাংসদ ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি এবং উপজেলা প্রশাসন খাদ্য গুদামে প্রভাবশালী চক্রকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি তালিকাভুক্ত প্রকৃত কৃষক যাতে ধান বিক্রি করতে পারে সে বিষয়ে যথেষ্ট তৎপরতা নেওয়া হয়। কিন্তু উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল হাকিম ও খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেটের ফলে এ উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

উপজেলার মুশুদ্দি কামারপাড়া গ্রামের কৃষক আসাদুজ্জামান চাঁন মিয়া, বাঐজানানের সুরুজ্জামান, নরিল্লা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ ঠাকুর, বলিভদ্র গ্রামের কৃষক মুক্তিযোদ্ধা মোখলেছুর রহমানসহ স্থানীয় কৃষকেরা অভিযোগ করেন, ধান ক্রয় অভিযান শুরু হলে স্থানীয় কৃষকেরা ধান দেওয়ার জন্য নমুনা নিয়ে উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের কাছে ধানের মাণ ও আদ্রতা পরীক্ষা করাতে যায়। এ সময় ধানের মাণ ভালো না এমন অজুহাতে কৃষকদের বারবার ফিরিয়ে দিয়ে হয়রানি করতে থাকেন তিনি। অথচ সেই ধানই কৃষকের কাছ থেকে না কিনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উৎকোচের বিনিময়ে গুদামে সরবরাহ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী দালালেরা। ফলে কৃষকেরা খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করতে না পেরে ন্যায মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ দিকে, উপজেলার কৃষকদের অভিযোগ, ‘গুদামে ধান সংগ্রহে মাণ যাচাইয়ের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি টাকার বিনিময়ে নিম্নমানের ধান দিয়ে গুদাম ভর্তি করা হচ্ছে। দালালদের মাধ্যমে সরবরাহকৃত ধান যাচাই-বাছাই না করে তাৎক্ষণিকভাবে গুদামজাত করা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকদের পক্ষ থেকে ধান নিয়ে আসা হলে ওই ধান নিয়ে নানা রকম জটিলতা ও তালবাহানা করে কৃষকদের ধান পুনরায় রোদে শুকিয়ে নিয়ে আসার কথা বলে হয়রানি করা হচ্ছে মুশুদ্দি কামারপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আসাদুজ্জামান চাঁন মিয়া বলেন, ‘বারবার রোদে শুকিয়ে ফ্যানের বাতাসে ধান ও চিটা পৃথক করে ৩০ মণ ধান নিয়ে গত তিন মাস যাবত খাদ্য গুদামে ঘুরছি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ও গতকাল সোমবার (২৬ আগস্ট) খাদ্য গুদামে এসে ঘুষ না দিতে পারায় ধান বিক্রি করতে পারিনি।’

এ দিকে, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে কৃষকদের আনিত এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সরবরাহকৃত কৃষকদের তালিকা মোতাবেক ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। গুদামে কোনো সিন্ডিকেট নেই। এছাড়া সরকারি বিধি মোতাবেকই ধান ক্রয় করা হচ্ছে।

ধনবাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল হাকিম বলেন, কে কৃষক আর কে ব্যবসায়ী এটা আমার জানার বিষয় না। কৃষি তালিকা অনুযায়ী ধান ক্রয় করা হয়েছে। প্রকৃত কৃষকদের ধান ফেরত দিয়ে রাতের আধাঁরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে বলেন, বন্ধের দিন এবং রাতেও ধান কেনার বিধান রয়েছে।

এ ব্যাপারে ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা সিদ্দিকার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, খাদ্য বিভাগের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।

ওডি/আইএইচএন

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড