বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ায় মায়িশা ফাহমিদা সেমন্তি (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রীকে আত্মহত্যায় বাধ্য করার অভিযোগে দুই কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আত্মহননকারী স্কুলছাত্রীর বাবা হাসানুল মাশরেক রুমন সোমবার (২৭ আগস্ট) বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকার তৌহিদুল ইসলামের ছেলে আবির আহমেদ (২০) ও একই এলাকার জিল্লুর রহমানের ছেলে শাহারিয়ার অন্তু (২১)। আবির আহমেদ বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং শাহরিয়ার অন্তু একই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রী সেমন্তির নগ্ন ছবি তোলার পর ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাকে আত্মহত্যায় বাধ্য করানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক একেএম ফজলুল হক মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
বগুড়ার স্কুলছাত্রী সেমন্তির বাবা হাসানুল মাশরেক একই অভিযোগে গত ২১ আগস্ট উল্লেখিত দুই আসামির বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। সেই আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১৮ জুন দিবাগত রাতে বগুড়া ওয়াইএমসিএ স্কুল ও কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী মায়িশা ফাহমিদা সেমন্তি নিজ ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নার কাপড় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
সোমবার আবারও বগুড়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় করা হয়। মামলায় অভিযোগে বলা হয়, স্কুলছাত্রী সেমন্তির সঙ্গে কলেজছাত্র আবির আহমেদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে আবিরের পরামর্শে সেমন্তি তার মোবাইল ফোনে কিছু নগ্ন ছবি তোলে। এরপর ওই ছবিগুলো সেমন্তির মোবাইল ফোন থেকে আবির তার নিজের মোবাইল ফোনে নিয়ে নেয়।
তারপর ওই ছবিগুলোর একটি অপর আসামি শাহারিয়ার অন্তুর মোবাইল ফোনে পাঠায় আবির। এরপর আবির ও অন্তু সেমন্তিকে ফোন করে ওই ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। তাদের অব্যাহত হুমকির মুখে সেমন্তি গত ১৮ জুন দিবাগত ভোর রাতে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নার কাপড় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
এ মামলার বাদী হাসানুল মাশরেক রুমন মামলায় অভিযোগ করেন, তার মেয়ের আত্মহত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে আসামি আবির তাকে দুবার ফোন দেয় এবং বলে ‘আপনার মেয়ে আজ রাতে সুইসাইড করতে পারে।’
এরপর আমি আমার মেয়েকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তখন সে আবির নামে ওই ছেলেটির সঙ্গে তার ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠার কথা উল্লেখ করে জানায়, আবিরের মোবাইল ফোনে তার নগ্ন ছবি রয়েছে। ওই ছবিগুলো আবির ও তার পরিচিত অন্তু ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। তখন আমি আমার মেয়েকে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত না হওয়ার পরামর্শ দিই। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা পরেই সে আত্মহত্যা করে।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ওই ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তা নিয়ে বরং ঘটনাকে অপমৃত্যু মামলা রুজু করে। পরবর্তীতে মামলা করতে গেলে গত ১৪ আগস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেওয়া হয়।
বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নরেশ মুখার্জি জানান, স্কুলছাত্রী সেমন্তির আত্মহত্যায় প্ররোচনাসংক্রান্ত মামলাটি তদন্তের জন্য আদালত বগুড়া পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড