• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পরিকল্পনার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে রাজশাহীর বিসিক শিল্প নগরী

  রাজু আহমেদ, রাজশাহী প্রতিনিধি

২৬ আগস্ট ২০১৯, ১৪:১৫
শিল্প নগরী
বিসিক শিল্প নগরী (ছবি : দৈনিক অধিকার)

অবকাঠামোসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজশাহী নগরীর সপুরায় অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরী। সেগুলোর সমাধান না করে বিসিক কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি করে চলেছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তার ওপর রাজশাহী সিটি করপোরেশন নতুন করে হোল্ডিং ট্যাক্সের নামে চেয়ে বসেছে দেড় কোটি টাকা। ফলে নানা অজুহাতে প্রতিবছর বাড়তি সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি ও উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এই এলাকায় শিল্প সৃষ্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

সরেজমিনে বিসিক শিল্প নগরীর মূল প্রবেশ সড়কসহ বেশ কয়েকটি রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে এই রাস্তাগুলোর অধিকাংশই ভাঙা বা গর্ত হয়ে রয়েছে। আবার রাস্তার ধারে বহু অংশই দখলদারদের কবলে। ড্রেনগুলোতে ময়লা পানি উপচে পড়ছে। শিল্প কলকারখানাগুলোতে নেই বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি)। স্থানীয় কারখানার অপরিশোধিত পানি সরাসরি রাজশাহীর উত্তর প্রান্তের পবা উপজেলার বারনই নদীর পানিতে গিয়ে মিশছে। অভিযোগ রয়েছে এই বিসিকের অপরিশোধিত পানির কারণে আশপাশের নদী-নালার পানি দূষিত হয়ে পড়ছে।

রাজশাহী বিসিক শিল্প নগরীর বাৎসরিক সার্ভিস চার্জ বাবদ কী পরিমাণ আয় হয় এমন প্রশ্নের তাৎক্ষনিক কোনো উত্তর দিতে পারেন নি প্রতিষ্ঠানটির স্টেস অফিসার মো. ওয়ইসকুরুনী।

আব্দুল মালেক, রাজশাহী বিসিক শিল্প নগরীর একজন পুরাতন প্লট মালিক, শিল্প উদ্যোক্তা ও বিসিক এলাকার ব্যবসায়ী নেতা। স্বাধীনতার পূর্বে লেখাপড়া করেছেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। তার ভাষায়, পরের হয়ে চাকরি না করে নিজে শিল্প গড়ে তুলবেন ও অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন এই আশায় ১৯৭২ সালে রাজশাহীর বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় একটি প্লট নিয়ে টেক্সটাইল মিল গড়ে তোলেন। চায়না থেকে সুতা এনে কাপড় তৈরি করতেন সেখানে। এক সময় রমরমা ছিল তার টেক্সটাইল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতায় দেশের অন্যান্য টেক্সটাইলের মতো তারটিও বন্ধ হয়েছে। এখন সেই জায়গায় গড়ে তুলেছেন একটি বেকারি। পাশেই রয়েছে অন্য কোম্পানির তৈরি করা টাইলসের একটি শোরুম।

ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা মালেক প্রশ্ন করে বলেন, কর্মসংস্থানসহ এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য কথায় কথায় রাজশাহীতে শিল্পায়ন সৃষ্টির কথা বলা হয়। অথচ এখানে যে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলোই টিকিয়ে রাখা মুশকিল হচ্ছে। তাদের দুর্দশার খোঁজ রাখা হচ্ছে না। বিসিক শিল্প এলাকায় যোগাযোগ ও পয়-নিষ্কাশন ব্যবস্থার দুরাবস্থা, জ্বলানি ও বিদ্যুৎ সঙ্কটে জর্জরিত। এ অবস্থায় নতুন করে কী শিল্পায়ন করবেন?

বিসিক শিল্প নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ১৯৫৭ সালে প্রায় ১০০ একর জায়গার ওপর ২০২টি প্লট নিয়ে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী। আবেদনের প্রেক্ষিতে ও পর্যাপ্ত মূল্যের বিনিময়ে ৫৮-৫৯ সাল থেকে প্লটগুলো ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর শুরু হয়। উদ্দেশ্য ছিল শিল্পায়নের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া এই রাজশাহী অঞ্চলে কর্মস্থানের পাশাপাশি উন্নয়ন ঘটানো।

তবে সময়ের পরিক্রমায় বিসিক কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকারের হটকারী সিদ্ধান্ত, সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা, উপযুক্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের অভাবে এই শিল্পনগরী সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এখন হারাতে বসেছে তাদের মূল পুঁজি। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন উৎপাদনমুখী শিল্প থেকে।

কারণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এই শিল্প নগরী শুরু হওয়ার পর বিসিক কর্তৃপক্ষ একর প্রতি (তিন বিঘা) সার্ভিস চার্জ নিত ৫০০ টাকা। সেই সার্ভিস চার্জ এখন একর ছেড়ে বর্গফুটের হিসেবে এসেছে। ২০১৫ সাল থেকে কর্তৃপক্ষ প্লটের মালিকদের কাছ থেকে প্রতি বর্গফুট জায়গার জন্য নিচ্ছে তিন টাকা। অথচ কোনো সার্ভিস দিচ্ছে না তারা। এলাকাটির রাস্তাগুলো ভাঙাচোরা। যানবাহন চলাচলের অযোগ্য প্রায়। ড্রেনগুলোরও বেহাল দশা। ড্রেনের পানি উপচে রাস্তায় জমে। পোলগুলোতে পর্যাপ্ত লাইট না থাকায়, রাতে অধিকাংশ রাস্তা অন্ধকার থাকে। পুরো এলাকায় নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিদ্যুত ও জ্বালানি সঙ্কট তো আছেই। বহুদিন থেকে এই শিল্প নগরীতে সংস্কার মূলক বা উন্নয়নমূলক কোনো কাজ করে না কর্তৃপক্ষ। যার সবই করার কথা বিসিক কর্তৃপক্ষের। বারংবার অভিযোগ করেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এক কথায় কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় বর্তমানে রাজশাহী বিসিকের পরিবেশ মোটেও ব্যবসা বান্ধব নয়।

এ দিকে পাবনা, বগুড়াসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বিসিক কর্তৃপক্ষ যেসব শিল্প নগরী গড়ে তুলেছে, তার পুরোটাই প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। আর রাজশাহীর এই শিল্প নগরীটি সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। এর চতুর দিকে প্রায় ১৬টি মতো রাস্তা রয়েছে। যেগুলো ব্যবহার করে যে কেউ অনায়াশে প্রবেশ বা বাইরে যেতে পারছে। এক কথায় অনিরাপদ আমাদের রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী।

এমন দুরাবস্থায় যখন খুঁড়িয়ে চলছে রাজশাহীর এই শিল্প নগরীর ব্যবসায়ীরা তখন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) মরার ওপর খাঁড়ার ঘা এর মতো এসে দাঁড়িয়েছে। রাসিক এবছর এই শিল্প এলাকা থেকে এক কোটি ৫৫ লাখ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দাবি করছে। অথচ বগুড়ার বিসিকি শিল্পনগরী ব্যবসার কবলে রাজশাহীর থেকে বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাদের পৌর কর ধার্য করা হয়েছে মাত্র ১৪ হাজার টাকা। তাদের রয়েছে গ্যাস সুবিধা। প্রায় একই অবস্থা সিরাগঞ্জের। তাদের পৌরকর ১০ হাজার টাকা। নওগাঁর ছয় হাজার, চাঁপাই নবাবগঞ্জের ২৪ হাজার ও গাইবান্ধা শিল্পনগরীর পৌর কর ২০ হাজার টাকা।

রাজশাহী বিসিকের রিজেওনাল ডাইরেক্টর তামান্না রহমান ব্যবসায়ীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানান, অনেক প্লট হোল্ডার তাদের সার্ভিস চার্জ ঠিকমতো পরিশোধ করেন না। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়া যাওয়ায় আমরা এই সপুরা শিল্প নগরীর অবকাঠামো উন্নয়নে হাত দিতে পারছি না।

তিনি আরও জানান, রাজশাহী বিসিকের শিল্প নগরীটি বেশ পুরাতন। তাই এখানকার অবকাঠামো উন্নয়নে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় আমরা এই শিল্প নগরীর রাস্তা ও ড্রেন উন্নয়নে কাজ শুরু করেছি। মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছেন।

ওডি/এসজেএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড