সুবল রায়, দিনাজপুর
আজ ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস। ২০০৬ সালের এই দিনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল, জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং বিদেশি কোম্পানি এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী থেকে প্রত্যাহারের দাবীতে বিক্ষোভকারী জনতার উপর গুলি বর্ষণ ও লাঠিচার্জ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে প্রাণ হারায় তিনজন ও আহত হয় ২ শতাধিক।
ঘটনার এক যুগ পার হলেও পূরণ হয়নি ফুলবাড়ীবাসীর ৬ দফা চুক্তি। ঘোষিত ৬ দফা বাস্তবায়নের পাশাপাশি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন ষড়যন্ত্র ও পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম বন্ধ এবং কয়লা গায়েবের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি আন্দোলনকারীদের।
২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল, জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং বিদেশী কোম্পানি এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নামে স্থানীয় জনতা। দুপুরে একটি বিশাল প্রতিবাদ মিছিল নিমতলা মোড়ের দিকে এগুতে থাকলে প্রথমে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ-বিডিআরের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিলটি এগিয়ে গেলে টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ও নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করা হয়।
এ সময় গুলিতে নিহত হয় আল আমিন, সালেকীন ও তরিকুল। আহত হয় ২ শতাধিক আন্দোলনকারী জনতা। এরপর ফুলবাড়ীবাসী ধর্মঘট শুরু করলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বাধ্য হয়ে তৎকালীন জোট সরকার ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কার, দেশের কোথাও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যাবে না সহ ৬ দফা চুক্তি করলে এলাকাবাসী ধর্মঘট প্রত্যাহার করে।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী আন্দোলনের ৬ দফা চুক্তি গুলো হলো...
আন্দোলনে নিহত আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা। দেশের কোথাও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি করা হবে না। এশিয়া এনার্জি (জিসিএম) কোম্পানিকে চিরতরে দেশ থেকে বহিষ্কার করা। আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা গুলি বর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা।
এলাকাবাসী জানান, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি বিরোধী আন্দোলনে তিনজনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। কোনো ক্রমেই এই এলাকায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি চান না তারা।
আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে কোমড়ের নিচ পর্যন্ত অবস হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন বাবলু রায়। ওই সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কথা দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক হামিদুল হক জানান, ৬ দফা চুক্তির বাস্তবায়নের পাশাপাশি রামপাল, রূপপুরসহ সকল প্রকার পরিবেশ বিধ্বংসী ও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি করার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার কথা জানিয়েছে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। কয়লা খনি থেকে কয়লা চুরির ঘটনায় জড়িতদের বিচার করতে হবে।
ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র ও ফুলবাড়ী আন্দোলনের নেতা মুরতুজা সরকার মানিক জানান, ফুলবাড়ী রক্ষায় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মতে, ওই সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ওয়াদা করেছিলেন তা বাস্তবায়ন করবেন। এখনো এশিয়া এনার্জি নাম পরিবর্তন করে ষড়যন্ত্র করছে, ফুলবাড়ীবাসীকে নিয়ে প্রয়োজনে আবারও রক্ত দিয়ে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার ঘোষণা করা হবে।
তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আজকের দিনটিকে ‘জাতীয় সম্পদ রক্ষা দিবস’, সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ও ফুলবাড়ীবাসীর পক্ষ থেকে ‘ফুলবাড়ী শোক দিবস’ পালন উপলক্ষে র্যালি, শহীদ স্মৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড