• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাঁশ দিয়ে বাঁধা ছিল ব্রিজের রেলিং

  হারুন আনসারী, ফরিদপুর

২৫ আগস্ট ২০১৯, ১৮:২০
ফরিদপুর
বাঁশ দিয় তৈরি ব্রিজের রেলিং (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ফরিদপুরের ধুলদীতে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ব্যস্ততম মহাসড়কের ব্রিজের দুই পাশের নিরাপত্তা বেষ্টনী তথা রেলিংটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর সেটি বাঁশ দিয়ে মেরামত করা হয়েছিল। এ কারণে ওই রেলিংয়ে মহাসড়কে চলাচলরত সাধারণ যানবাহনের ওজনও বহন করার সক্ষমতা ছিল না। আর এ কারণেই গত শনিবার ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের দিকে আসা যাত্রীবাহী বাস কমফোর্ট লাইনের বাসটি একটি মোটরসাইকেলকে সাইড দিতে যেয়ে রেলিং ভেঙে খাদে পড়ে যায়। এতে ৮ জন নিহত ও অনেকে আহত হন।

এ দিকে, মর্মান্তিক এই সড়ক দুর্ঘটনার পর এমন একটি ব্যস্ততম মহাসড়কের নিরাপত্তা ও ব্রিজে বাঁশের রেলিং দিয়ে মেরামতের বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এই মহাসড়ক দিয়ে সারা দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। দ্রুতগামী বাস আটকাতে এই রেলিং কোনো কাজেই আসেনি। যদি বাঁশ দিয়ে মেরামত করা রেলিং না হয়ে মজবুত বেষ্টনী থাকত তবে হয়তো বাসটি খাদে পড়ত না এমন কথাও অনেকে বলছেন।

ধুলদী গ্রামে বাসিন্দা পাপলু মিয়া জানান, ওই ব্রিজের পাশেই নতুন একটি ব্রিজ ও চার লাইনের মহাসড়ক হচ্ছে। শীঘ্রই হয়তো নতুন ব্রিজটি উদ্বোধন হবে। তবে এর মাঝে পুরাতন এই ব্রিজটির রেলিং যে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে সে দিকে কারও খেয়াল ছিল না। ব্রিজের শ্রমিকেরাই হয়তো পুরাতন ওই ব্রিজের রেলিংটি ধসে পড়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য বাঁশ দিয়ে কোনোমতে টিকিয়ে রেখেছিল। তাতে তো আর বাসের ওজন মানে না!

একই গ্রামের বাসিন্দা মুদি দোকানদার জাহিদ মোল্যার অবশ্য ভিন্নমত রয়েছে। এই মহাসড়কে প্রতিদিন এত যানবাহন চলাচল করে সেখানে বাঁশের এই রেলিং কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না স্বীকার করে তিনি বলেন, রেলিংটি যদি কংক্রিটেরও হতো তাতেও কাজ হতো না। কারণ, এই মহাসড়কে দূরপাল্লার বাসের চালকেরা এত দ্রুত গতিতে বাস চালায় যে, একবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে সামনের কিছুই তাকে আটকাতে পারে না। তবে রেলিটি মজবুত হলে হতাহতের সংখ্যা কম হতো বলে তিনি স্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুল বারী বলেন, ব্রিজটিতে বাঁশের রেলিং দেওয়া আছে। তবে যে স্থান দিয়ে গাড়িটি খাদে পড়েছে সে জায়গায় লোহার রেলিংই ছিল।

ব্রিজে বাঁশের রেলিং দেওয়া হয়েছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কিছুদিন আগে দুর্ঘটনায় লোহার রেলিং ভেঙে যায়। পরবর্তীতে সাময়িকভাবে বাঁশ দিয়ে রেলিং দেয়া হয়। এ কারণে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আমরা সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছিলাম। পাশেই নতুন একটি ব্রিজের নির্মাণকাজ চলছে।

তবে ঘটনাস্থলে ওই ব্রিজের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি। ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক চার লেনে প্রশস্তকরণ ও সেতু নির্মাণের কাজের নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ‘মনিকো কনস্ট্রাকশন’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দুর্ঘটনা কবলিত ধুলদী ব্রিজের পাশে সড়ক প্রশস্তকরণ ও অপর একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ করছে।

এ দিকে, শনিবার ধুলদীতে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৮ জনেরই নাম পরিচয় পেয়েছে পুলিশ। তাদের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম নাসিম।

নিহতরা হলেন- ওই বাসের সুপারভাইজার গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার হানিফ মিয়া, মো. আব্দুল্লাহ, কোটালীপাড়ার ফারুক হোসেন, গোপালগঞ্জ সদরের আসমা আক্তার, ফরিদপুর সদর উপজেলার বিলমামুদপুরের ওয়াহিদুজ্জামান, নড়াইলের বনগ্রামের আলী খন্দকার ও কালিবাড়ির লিপি আক্তার। এই দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১৮ জন বর্তমানে ফমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, নিহতদের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর সম্পন্ন করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করা হয়েছে যদিও দুর্ঘটনার কারণ সবই উদঘাটিত। হাসপাতালে আহতদের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত শনিবার দুপুর দুইটার দিকে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ যাওয়ার পথে কমফোর্ট লাইনের একটি যাত্রিবাহী বাস ধুলদী রেল গেইটের কাছে ব্রিজের রেলিং ভেঙে খাদে পড়ে যায়। এতে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ধাবমান বাসটি বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলকে সাইড দিতে যেয়ে রেলিং ভেঙে খাদে পড়ে যায়।

ওডি/এমবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড