গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মুক্তিপণের ১৫ লাখ টাকা দিতে না পারায় অপহরণের ১৮ দিন পর অপহৃত ব্যক্তিকে হত্যা করেছে অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- কালিয়াকৈরের চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার ইয়াকুব শেখ (৬০) ও তার ছেলে কামরুজ্জামান (২৫) এবং রাজশাহী পুঠিয়া থানার কান্দা এলাকার শামসুল মণ্ডলের ছেলে মো. শামীম (২২)।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকালে মোল্লাপাড়া পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ডোবায় লাশটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে।
নিহত অহিরুল ইসলাম পাবনার আটঘড়িয়া থানার ভরতপুর এলাকার ফুজলুল হকের ছেলে। নিহত অহিরুল দীর্ঘ দিন যাবত কালিয়াকৈর পৌরসভার কাঠাতলা এলাকায় মালেকের বাসায় ভাড়া থেকে ময়েজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলে চাকরি করত।
কালিয়াকৈর থানার ওসি আলমগীর হোসেন মজুমদার নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, কারখানা শ্রমিক অহিরুল ইসলাম গত ৬ আগস্ট রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি পাবনা যাওয়ার উদ্দেশে বের হন, কিন্তু তিনি পাবনা নিজ বাড়িতে তিনি পৌঁছাননি। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না এবং অহিরুলের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মুঠোফোনটিও বন্ধ পাচ্ছিল পরিবারের লোকজন।
এরপর হঠাৎ অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তি গত ১২ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় এবং ১৩ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে অহিরুলের মুঠোফোন থেকে নিহতের চাচাতো ভাই পাঞ্জাব আলীকে ফোন করে। পরপর দুই দিনই ওই ব্যক্তি মুঠোফোনে জানায়, অহিরুল তার হেফাজতে আছে তাকে নিতে হলে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। দাবিকৃত টাকা না দিলে অহিরুলকে হত্যা করে লাশ গুম করা হবে বলেও হুমকি দেয় অপহরণকারী।
এরই প্রেক্ষিতে নিহতের চাচাতো ভাই পাঞ্জাব আলী গত ২০ আগস্ট কালিয়াকৈর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। তার মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ রাজশাহীর পুঠিয়া থানার কান্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে থেকে শামসুল মণ্ডলের ছেলে শামীমকে গ্রেফতার করে। শামীম চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় ইয়াকুব শেখের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শামীম জানায়, বাড়িওয়ালা মালিক ইয়াকুব শেখ, তার ছেলে মো. কালাম ও কামরুজ্জামান ওরফে কামরুলের সহযোগিতায় অপহরণের এক দিন পর ৭ আগস্ট অহিরুলের হাত-পা এবং মুখ বেঁধে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর অহিরুলকে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে ইয়াকুব শেখের বাড়ির নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২২ অগাস্ট) রাত দুইটার দিকে পুলিশ ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে তল্লাশি করে কোনো লাশের সন্ধান পায়নি তবে সেপটিক ট্যাংকে দুর্গন্ধ ছিল। পরে পুলিশ বাড়িওয়ালা ইয়াকুব ও তার ছেলে কামরুলকে আটক করে। এ সময় অপর ছেলে কালাম পালিয়ে যায়।
পরে ইয়াকুব ও তার ছেলে কামরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা পুলিশকে জানায়, হত্যা মামলা থেকে বেঁচে যাওয়ার জন্য সে এবং তার দুই ছেলে মিলে বুধবার (২১ অগাস্ট) সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশ তুলে তাদের বাড়ির পাশে একটি ডোবায় ফেলে দেয়।
পরে পুলিশ শুক্রবার সকালে সেই ডোবা থেকে অহিরুলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
গ্রেফতারকৃতদের শুক্রবার বিকালে গাজীপুর আদালতে হাজির করা হলে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ওসি আলমগীর হোসেন মজুমদার জানান, হত্যার দায় স্বীকার করে গ্রেফতারকৃত তিনজনই শুক্রবার গাজীপুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ওডি/এমবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড