রংপুর প্রতিনিধি
রংপুর নগরীর নজিরেরহাটে তৃতীয় শ্রেনির এক ছাত্রী প্রায় ২৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় তাকে রংপুর নগরীতে অবস্থিত একটি বেসরকারি সংস্থার আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষকের রহস্যজনকভাবে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ধর্ষিতার মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।
হাজিরহাট থানার সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর নজিরের হাটের রাধাকৃষ্ণপুর রহমতপাড়ার শাফিয়ার রহমানের স্ত্রী বিলকিস বেগম সোনার বাংলা নার্সারি ও এগ্রোবাংলা লিমিটেডের কেয়ারটেকার তোফাজ্জল হোসেনের রান্নার কাজ করতেন। মা কাজ করায় তার কন্যা রাধাকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী স্বপ্না (১১) সেখানে যাতায়াত করতো। মায়ের সঙ্গে স্বপ্নাও ওই নার্সারিতে বিভিন্ন সময় কাজ করতো।
সেখানে তোফাজ্জল হোসেনের ধর্ষণে স্বপ্না অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। নগরীর মেরী স্টোপসে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর দেখা যায় স্বপ্না ২৫ সপ্তাহ ২দিনের অন্তঃসত্ত্বা। এরপর মেয়েটিকে নগরীর নজিরেরহাটে ল্যাপরোসি মিশনে ভর্তি করা হয়। এরপর মেয়ের মা বিলকিস বেগম ১৮ আগস্ট হাজিরহাট থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন।
হাজিরহাট থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান জানান, ধর্ষিতার মা বিলকিস বেগম একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক অভিযোগ তিনি (তোফাজ্জল হোসেন) মারা গেছেন। প্রাথমিকভাবে তিনি বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যুর বিষয়টি বলা হচ্ছে। তবে তার মৃত্যুটা স্বাভাবিক নাকি বিষক্রিয়ায় হয়েছে সে বিষয়টি আমরা তদন্ত শুরু করেছি। হাসপাতালের কাগজপত্র নেওয়ার চেস্টা করছি।
তিনি জানান, মেয়েটির বয়স ১৪ বছর দেখালেও প্রকৃত পক্ষে মেয়েটির বয়স হবে ১১। মেয়েটি ছোট ও অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় এখনও স্পস্ট করে কারও নাম বলছে না। মেয়েটি এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্থ অবস্থায় আছে। তবে খুব দ্রুত অভিযুক্ত ধর্ষকের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করা হবে।
রিপোর্টে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে (ছবি- দৈনিক অধিকার)
ওই ছাত্রীর মা জানান, তোফাজ্জল হোসেন দীর্ঘ দিন থেকে রংপুর নগরীর নাজিরেরহাটের সোনার বাংলা নার্সারি দেখাশুনার কাজ করতো। আমি তার রান্নাবান্নার কাজ করে দিতাম। আমার মেয়েও সেখানে আসা যাওয়া করতো। আমার মেয়ে আমাকে জানিয়েছে তোফাজ্জল আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। আমি আমার মেয়ের পেট বড় হওয়ার পর বিয়ষটি টের পেয়েছি। এখন আমার মেয়ের বাচ্চাটার কী হবে। সেটা আমি জানতে চাই। আমাকে এখনই কেউ ঘর ভাড়াও দিচ্ছে না। সমাজে একঘরে করে রেখেছে। জানাজানি হওয়ার পর শুনেছি তোফাজ্জল নার্সারিতে দেওয়া কীটনাশক ওষুধ খেয়ে গত শুক্রবার অসুস্থ হয়। তাকে হাসাপাতালে নেওয়া হলে তিনি মারা যান।
তিনি বলেন, আমি মামলা করেছি। এর পেছনে তোফাজ্জল নাকি আরও অন্য কেউ জড়িত আছে। সেটা খুঁজে বের করতে হবে পুলিশকে।
সোনার বাংলা নার্সারি এন্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিক জুয়েল জানান, তিন বছর থেকে তোফাজ্জল তার নার্সারির সব বিষয় দেখাশুনা করে আসছে। ঈদের ছুটিতে তিনি গ্রামের বাড়িতে যান। গত শুক্রবার খবর পান তোফাজ্জল বিষ খেয়েছে। তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে হার্ট এ্যটাকে তিনি মারা যান। এরপর তাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
তোফাজ্জলের বিরুদ্ধে তৃতীয় শ্রেনির ছাত্রীকে ধর্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। পোস্টমর্টেম ছাড়াই দাফনের বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবার চায়নি তাই পোস্টমর্টেম হয়নি।
অন্যদিকে চন্দনপাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান জানান, আমার ইউনিয়নের ওই বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেনের বিষয়ে আমি খবর পাই, সোনারবাংলা নার্সারিতে চাকরি করতো সে। সেখানেই সে বিষ পান করে। এরপর মালিক তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করলে তিনি সেখানেই মারা যান।
তারা পোস্টমর্টেম না করার ব্যপারে মতামত দেওয়ায় পোস্ট মোর্টেম ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়েছে। পরে তাকে ঈশ্বরপুর সর্দারপাড়ায় তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। অনেকেই এখন বলছেন তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড