মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্য দিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও ডেঙ্গু রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষায় অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
চলতি বছরের ৩০ জুলাই থেকে এখানে এখন পর্যন্ত ৪৬ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ১১ জনকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ছয়জন ডেঙ্গু রোগী এখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিরা চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতাল কমপ্লেক্স ভবনের চারপাশে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। হাসপাতালের পানির ড্রেনগুলো বিভিন্ন আবর্জনায় আটকে আছে। এতে করে ড্রেনের পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং ময়লার ওপর মশা-মাছি উড়ছে। ভবনের পেছনের ফাঁকা জায়গায় আগাছা ও জঙ্গল দেখা গেছে।
অন্যদিকে হাসপাতালের ভেতরে রোগীর ওয়ার্ড, টয়লেট-বাথরুম গুলোও স্যাঁতস্যাঁতে, হলদে-কালচে দাগসহ নোংরা অবস্থায় দেখতে পাওয়া গেছে। রোগীর বেডের নিচে বিড়াল বসবাস করছে।
এ সময় আরও লক্ষ্য করা গেছে যে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর রুমে ওষুধের খালি প্যাকেট-বাক্স, স্যালাইনের বোতল, ময়লা ও রক্তমাখা বিছানার চাদর ইত্যাদি যেখানে সেখানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। একাধিক ওষুধের জিনিসপত্র বস্তাবন্দী করে রাখা হয়েছে ওই স্টোর রুমে।
এ বাপারে এক সেবিকা বলেন, এ গুলোর ছবি তুলে কি করবেন? কয়েকদিন পরে এগুলো নিয়ে যাবে। কমপ্লেক্সের নোংরা পরিবেশে রোগীদের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনা ও নোংরা পরিবেশে অসুস্থ রোগীতো বটেই এখানে রোগীর সঙ্গে আসা অভিভাবক ও আত্মীয়-স্বজনদেরও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকতে হয় বলে রোগীর অভিভাবকরা জানান।
অপর একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ডাক্তার, সেবিকা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির এমন বেহাল দশা হয়েছে।
চলতি মাসের ৭ আগস্ট সরকারের মশক নিধন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান কর্মসূচিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় লোক দেখানো অভিযান নামে মাত্র পালন করা হলেও মূলত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল গুলোকে ডেঙ্গু রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন, সে অনুযায়ী এখানে ডেঙ্গু রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করাটা অতি দুঃখজনক!
সূত্রটি আরও জানায়, হাসপাতালের সার্বিক মান উন্নয়নের জন্য এখানে ব্যক্তি উদ্যোগে জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে একাধিক ব্যক্তি খণ্ডকালীন কর্মচারীদের বেতনের টাকা যোগান দিচ্ছেন এমন কয়েকটি অনুদান দেওয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তির নামও শোনা গেছে।
এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগী ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য কয়েকটি পরীক্ষা এখান থেকে করা হচ্ছে। আর এসব পরীক্ষা করাতে রোগীদের গুণতে হচ্ছে দিগুণ টাকা। প্লাটিলেট কাউন্ট পরীক্ষার নামে ১০০ টাকা বেশি আদায় করা হলেও ব্যবস্থাপত্রে ওই পরীক্ষার কথা উল্লেখ নেই। এছাড়া প্রয়োজনে রোগীর অন্যান্য পরীক্ষা অন্যত্র থেকে করে আনার জন্য বলা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্যাথলজি বিভাগে কর্মরত একজনকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি প্লাটিলেট কাউন্ট পরীক্ষা বাবদ টাকা নেওয়ার কথা জানান, তাহলে ব্যবস্থাপত্রে ওই পরীক্ষার কথা উল্লেখ নেই কেন? তবে এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সৈয়দ রেজাউল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেছেন, খোঁজ খবর করে কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নিতে সহজ হবে। আর হাসপাতালে অপরিচ্ছন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে তুলনামূলক অন্য হাসপাতালের তুলনায় শ্রীনগরের অবস্থা ভালো। তারপরেও বিষয়টির প্রতি নজর দেওয়া হবে।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড