নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁয় এফিডেভিট করে বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন রজনী আক্তার (২১) নামে এক কলেজছাত্রী।
তিনি বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার ছাতনী মাতোপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম এবং মৃত জুলেখা বানুর মেয়ে। রজনী সান্তাহার সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার নানার বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের চুনিয়াগাড়ী গ্রামে এবং নানার নাম মৃত মতিন প্রামাণিক।
রবিবার (১৮ আগস্ট) নওগাঁ জজ কোর্টের আইনজীবী হারুন অর রশীদ এবং নোটারি পাবলিক সোলাইমান আলী চৌধুরী স্বাক্ষরিত ৩শ টাকার দলিলে এফিডেভিটের মাধ্যমে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন বাবা ও মেয়ে।
এফিডেভিট সূত্রে জানা যায়, রজনী আক্তারের মা জুলেখা বানু ২০০৭ সালে মারা যান। তার মায়ের গর্ভের তিন সন্তান। তিনি সবার বড়। মা মারা যাওয়ার পর ছোট বোন জান্নাতুন তার চাচার কাছে প্রতিপালিত হচ্ছে। ছোট ভাই বিজয় মুরগির ফিডের একটি দোকানে থাকে। বাবা জাহাঙ্গীর আলম নতুন করে বিয়ে করে সংসার করছেন।
রজনী আক্তার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা লেখাপড়ার সব খরচ বন্ধ করে দেন। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় পড়াশোনা করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করে সে। টিউশনি করে নিজের খরচ চালাত। সেই সঙ্গে বাবাকে সহযোগিতা করত।
তার বাবার টাকার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসী ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর চলত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নওগাঁ সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের প্রবাসী সৈকত আলী (৫৫) যিনি একাধিক বিয়ে করেছেন তার সঙ্গে তাকে ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে দুই দিন একটি ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হয়।
এরপর বৃদ্ধ সৈকত আলীর কাছ থেকে দুই দফায় ৭০ হাজার টাকা নিয়ে ২৭ অক্টোবর জোর করে তার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকে বাবা জাহাঙ্গীর আলম তার জামাইয়ের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে স্বামী তাকে গালিগালাজ ও মারপিট করত। তাকে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষাও দিতে দেওয়া হয়নি।
অপর দিকে, টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় একাধিক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে মেয়ের সংসার ভেঙে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এছাড়া গোপনে মেয়ের নগ্ন ছবি সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইল করেন ওই পাষণ্ড বাবা। গত বছরের ৯ নভেম্বর মালেশিয়া চলে যান স্বামী সৈকত আলী।
এরপর স্বামীর বাড়ি থেকে রজনী আক্তার তার নানার বাড়িতে এসে মামাদের আশ্রয়ে রয়েছে। প্রায় এক মাস হলো সৈকত আলী বাড়িতে আসছেন এবং রজনী আক্তারকে নিতে চান। কিন্তু তিনি আর বৃদ্ধ স্বামীর সংসার করতে চান না। অপর দিকে বাবার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।
রজনী আক্তারের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার মেয়েকে কোনো প্রকার নির্যাতন করিনি। টাকা নিয়েও প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়নি। মেয়ে নিজে থেকেই বিয়ে করেছে। গত চার মাস থেকে মেয়ের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নাই। এখন যদি এফিডেভিট করে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাহলে আর কি করার।
রজনী আক্তারের স্বামী সৈকত আলী বলেন, মেয়ের বাড়িতে ঘটক পাঠিয়ে প্রস্তাব দিয়ে বিয়ে করেছি। বিয়েতে এক লাখ টাকা মোহরানা বাধা হয়েছিল। সে সময় নাক ও কানের সোনার অলঙ্কার দেওয়া হয়েছিল। আমি বিদেশ যাওয়ার পর চিকিৎসার নাম করে স্ত্রী রজনী আক্তার বাড়ি থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। দেশে আসছি প্রায় এক মাস হলো। স্ত্রীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নাই। এখন স্ত্রী যদি ভাত খেতে চায় দেব, এতে আমার কোনো আপত্তি নাই।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড