পথচারীদের কাজেই আসছে না ৩ কোটি টাকার ব্রিজ

ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় দুই জেলার মানুষের যোগাযোগের জন্য ২ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা দিয়ে বালিয়াডাঙ্গী-লাহিড়ী সড়কের তীর্ণই নদীর উপর নির্মিত ৬৯ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজটি কোনো কাজে আসছে না পথচারীদের। ব্রিজ নির্মাণের পর দুপাশের রাস্তা পাকাকরণ না হওয়ার কারণে ঝুঁকি নিয়ে পুরাতন ব্রিজটি দিয়েই যাতায়াত করছে দুই জেলার অর্ধলক্ষের বেশি মানুষ।

ঠাকুরগাঁও জেলার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী লাহিড়ী হাটে শুক্রবার ও সোমবার প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের সমাগম ঘটে। ঠাকুরগাঁও সদর, নেকমরদ, রাণীশংকৈল, হরিপুর, পীরগঞ্জসহ দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জের বেশির ভাগ মানুষেই পশু কেনা-বেচার একমাত্র বড় বাজার লাহিড়ী হাট। আর লাহিড়ী হাতে যেতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে প্রায় ৩ কোটি টাকা দিয়ে ব্রিজ নির্মাণের ব্যবস্থা করে স্থানীয় সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মো. দবিরুল ইসলাম।

২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি শুক্রবার গরু ক্রয় করে নছিমনে চড়ে পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় নছিমন উল্টে ফজলুল করিম ও সাদ্দাম হোসেন নামে দুই গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়। এ সময় ইসলাম, পরেশ, ফরমান, ইউসুফ, সোহেল, কাসেম ও জহিরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হন।

অসমাপ্ত রাস্তার কাজ

একই বছরের ১৫ অক্টোবর পুরাতন ব্রিজ পারাপার হওয়ার সময় ট্রাকের ধাক্কায় আইনুল ইসলাম নামে এক সবজি ব্যবসায়ী নিহত হলে স্থানীয় সাংসদ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে ব্রিজ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলে ব্রিজের বরাদ্দ নিয়ে আসেন।

স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে বরাদ্দ প্রাপ্ত ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের বছরের শুরুতে। নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। রংপুর বিভাগের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ৬৯.০৫ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন রামবাবু নামে ঠাকুরগাঁও জেলার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

গত শুক্রবার ধান বোঝাই ট্রাক নিয়ে ফেরার সময় ট্রাক চালক ফরিদুল ইসলাম দৈনিক অধিকারকে জানান, বড় একটি ব্রিজ নির্মাণ হলেও দুপাশের রাস্তা পাকাকরণ না করাই ট্রাক নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। তাছাড়া রাস্তার দুপাশের বাঁধগুলো খুবই খারাপ। যে কোন সময় ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অটো চালক করিমুল ইসলাম দৈনিক অধিকারকে বলেন, ব্রিজের দুপাশের হেরিং বন্ড ঠিকমত করেনি কর্তৃপক্ষ। বালিয়াডাঙ্গী-লাহিড়ী দুবার অটো নিয়ে যাতায়াত করলে অটো মেরামত করা লাগে। তাই কোনো উপায় না থাকায় পুরাতন ব্রিজটি দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে যেতে হচ্ছে।

নব নির্মিত রাস্তায় ধস

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, চলতি বছর বর্ষার পানিতে ভেসে যায় ব্রিজের উত্তর পার্শ্বে করা হেরিং বন্ডের ইট। পরে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর পুনরায় ব্রিজের উত্তর পার্শ্বে হেরিং বন্ড করে দিলেও দীর্ঘ ৫ মাসে উদ্যোগ নেয়নি ব্রিজের দুপাশের রাস্তা পাকা করণের।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রামবাবু কন্সট্রাকশনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্রিজ নির্মাণ করা তাদের কাজ। ব্রিজ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে বিল তুলে নিয়েছেন তারা।

উপজেলা প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম দৈনিক অধিকারকে জানান, বালিয়াডাঙ্গী-লাহিড়ী রাস্তা খুব শীঘ্রই মেরামত করা হবে। রাস্তা মেরামতের সময় ব্রিজের দুপাশের রাস্তা পাকাকরণ করা হবে। তাছাড়া ব্রিজের দুপাশে রাস্তা বের করতে গিয়ে জমি নিয়ে কিছু জটিলতা ছিল। জমি সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে গিয়ে রাস্তা পাকাকরণ করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।

ওডি/আরবি