সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ
প্রতিবছর যমুনার জলে ডুবতে হয় সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা। এখানে বন্যা মানেই মাসব্যাপী সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। বন্যায় ভেঙে পড়ে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ সময়ে সাধারণ মানুষের কাজের ক্ষেত্র যেমন কমে যায় তেমনি খাদ্য সঙ্কটেও পড়েন বানভাসি মানুষ। বন্য দুর্গতদের জন্য সরকারি বরাদ্দ থাকলেও দুর্গম চরাঅঞ্চলে পৌঁছানো হয়ে পড়ে দায়। তাই তারা নিজেরাই নিজেদের সঙ্কট মোকাবেলার জন্য তৈরি করেছেন ফুড ব্যাংক।
দেড় বছর আগে উপজেলার ঘোরজান চরের বরংগাইল গ্রামের কোহিনূর বেগম প্রথম স্বপ্ন দেখেন বন্যার সময় সহযোগীতার হাত বাড়াবেন পাশের বাড়ির মানুষের জন্য। সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যেতে শুরু করেন তিনি। প্রথমবার নিজেই রান্নার জন্য বরাদ্দকৃত চাল থেকে একমুঠ করে জমাতে শুরু করেন চাল। আর তা দিয়েই পাশের বাড়ির অনাহারী মুখে তুলে দেন অন্ন। এরপর তার সঙ্গে যুক্ত হয় আশেপাশের চল্লিশজন নারী-পুরুষ।
বন্যা শুরু হলেই যেকোনো এলাকায় খাদ্যসঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে। চারদিকে পানি থাকায় বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। সরকারিভাবে বরাদ্দ করা ত্রাণও যথাসময়ে পাওয়া যায় না। এসব সমস্যা মাথায় রেখেই স্থানীয়ভাবে গড়ে তোলে এই ফুড ব্যাংক। বন্যা শুরু হলে এই ফুড ব্যাংক থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের খাদ্য সহায়তা দেয়। আর এজন্যই সবাই চাল জমিয়ে রাখেন বিপদের সময় সাহায্যের জন্য।
ফুড ব্যাংক পরিচালনা কমিটির সভাপতি কৃষানী কোহিনুর খাতুন জানান, নিজেদের কথা চিন্তা করে তার এক হয়েছেন। অসহায়রাও যে বন্যা, দুর্যোগসহ যেকোনো বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে, তারই দৃষ্টান্ত হিসেবে দেড় বছর আগে ফুড ব্যাংক চালু করা হয়। গ্রামের ৪০ জন কৃষাণ ও কৃষাণী এই ব্যাংকের সদস্য। প্রতি মাসে প্রত্যেক সদস্য আধা কেজি থেকে এক কেজি করে চাল ফুড ব্যাংকে জমা দেন। দুর্যোগকালীন এলাকার অসহায় ও বিপদগ্রস্থদের মধ্যে এগুলো বিতরণ করা হয়।
এই ব্যাংক থেকে উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের দক্ষিণ বরংগাইল চরে দ্বিতীয় দফায় বন্যায় গত ২৪ জুলাই ২০টি পরিবারের মধ্যে ৮ কেজি করে ১৬০ কেজি চাল বিতরণ করা হয়েছে।
নিজেদের সঙ্কট মোকাবেলায় নিজেরাই তৈরি করেছেন ফুড ব্যাংক (ছবি- দৈনিক অধিকার)
কোহিনুর খাতুন আরও বলেন, ‘আমরা গরিব বলে কি মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারব না? আমরা অসহায় দরিদ্র, কিন্তু আমাদের চাইতেও হতদরিদ্র মানুষ তো সমাজে রয়েছে। তাদের কথা চিন্তা করেই আমরা ফুড ব্যাংকটি গড়ে তুলেছি।’
ফুড ব্যাংকের রহিমা খাতুন নামে উদ্যোক্তা বলেন, গত দুতিন মাস আগে গ্রামের দুটি মেয়ের বিয়েতে ফুড ব্যাংক থেকে ১শ কেজি চাল সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জমা হওয়া চাল বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকা ব্যাংকে রাখা হয়েছে। এ টাকা দিয়েও মানুষের বিপদে সহায়তা করা হবে।
ফুড ব্যাংকের চাল পেয়ে গ্রামের সুমি খাতুন বলেন, বন্যার পানি এখনো তাদের ঘরবাড়িতে রয়েছে। কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি। ফুড ব্যাংকের মালিকেরা দরিদ্র অসহায় হলেও ব্যাংক জমানো চাল থেকে তাদের আট কেজি করে দিয়েছে। বন্যার পরে আমরা ফুড ব্যাংকের সদস্য হবো।
চৌহালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক সরকার বলেন, আসলেই এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। দুর্যোগপূর্ণ মানুষের পাশে আমার আমাদের যে টুকু সম্পদ আছে তা নিয়ে যেন দাঁড়াতে পারি। একজন দুস্থ মানুষরা আরেক জন দুস্থদের সহয়তা করছে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড