রাজশাহী প্রতিনিধি
অনিয়ম ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ এর বাগামারা জোনাল কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) রেজাউল করিমসহ ৬ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক (স্ট্যান্ড রিলিজ) বদলি করা হয়েছে। বদলি হওয়া অন্য কর্মকর্তারা হলেন- একই অফিসের এজিএম (কম) রবীন্দ্র বসাক, জুনিয়র প্রকৌশলী লুৎফর রহমান, মারফত আলী ও দুই লাইনম্যান। নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার সোহরাব হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি আদেশ শনিবার (১৭ আগস্ট) বাগমারা পল্লী বিদ্যুত কার্যালয়ে পৌঁছায়।
গত ৪ আগস্ট উপজেলার হাটৎপাড়া গ্রামের তিনটি বাড়িতে বিদ্যুত সংযোগ দিতে গিয়ে বৈদ্যুতিক পোলে ওঠে বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বাগমারা গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন (৫২) নামে এক ব্যক্তি। এই মৃত্যুর ঘটনায় বাগমারা পল্লী বিদ্যুত কার্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয় এবং পর স্থানীয় পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষের ওপর স্থানীয় জনগণের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। নিহত রিয়াজ উদ্দিনের মৃত্যুর তিনদিন পর নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ এর বাগামারা জোনাল কার্যালয়ের ডিজিএম রেজাউল করিম স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে প্রতিবাদ পাঠিয়ে দাবি করেন যে, নিহত রিয়াজ উদ্দিন তাদের কোনো কর্মী ছিলেন না। কিন্তু দুর্ঘটনার দিন তিনি বলেছিলেন যে, রিয়াজ উদ্দিন তাদের নিয়মিত কর্মী।
ওই ঘটনার তিনদিন পর নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পাঁচ কর্মদিবসে তদন্তকারী দল এই ঘটনাটি তদন্ত করে বাগমারা জোনাল কার্যালয়ের ডিজিএমসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব কর্তব্যে চরম অবহেলা ও দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে। পরে তাদের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার সোহরাব হোসেন জানান, ওই দিনের ঘটনায় নিহত রিয়াজ উদ্দিন আগে পল্লী বিদ্যুতের বাগমারা জোনাল কার্যালয়ে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে (খণ্ডকালীন লেবার) কাজ করতেন। সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করলে তাকে পল্লী বিদ্যুত থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। তারপর সে ওই অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে তিনটি বাড়িতে অবৈধভাবে মিটার স্থাপন করেছে। পরে সেখানে বিদ্যুত সংযোগ দিতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিছক দুর্ঘটনা নয়। এর সঙ্গে অনিয়ম দুর্নীতি ও কর্তব্যে অবহেলার বিষয়টি তদন্তে ওঠে এসেছে। তাই তাদেরকে তাৎক্ষনিক বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন পল্লী বিদ্যুতের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে এ ঘটনায় নিহত বিদ্যুত কর্মী রিয়াজ উদ্দিনের স্বজনরা দাবি করেন, রিয়াজ উদ্দিন বিগত ২০-২২ বছর ধরে নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ এর বাগামারা জোনাল কার্যালয়ে কাজ করছেন। প্রথমে মিটার রিডার হিসাবে কাজ করলেও পরে নিয়মিত কর্মী হিসাবে কাজ করেন। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের প্রায় সব কর্মী বিষয়টি জানেন। ওই দিন হটাৎপাড়া গ্রামে বিদ্যুত সংযোগ দেওয়ার আগের দিন বৃহস্পতিবার নিহত রিয়াজ উদ্দিন পল্লী বিদ্যুত অফিস থেকে তিনটি মিটার নিয়ে এসে তিনটি বাড়িতে স্থাপন করেন। পরের দিন সেখানে বিদ্যুত সংযোগ দিতে গিয়ে তিনি মারা যান।
হঠাৎপাড়া গ্রামের বিদ্যুত গ্রাহক রেখা খাতুন ও রেজাউল করিম জানান, ওই দিন রিয়াজ উদ্দিন সংযোগ দেওয়ার আগে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েই খুঁটিতে ওঠেন। তাদের মতে সেখানে সংযোগ বন্ধ না করেই ভুল বার্তা দেওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়।
ওডি/এসজেএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড