সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ
বন্যার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠবে, আবার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে যথাস্থানে বসে যাবে উভচরবাড়ি। বানের জলে ভাসবে এমন ভাসমান বাড়ি এবার নির্মিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের রানীগ্রামে। প্রতিবছর জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য নির্মিত ভাসমান বাড়ি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আশার আলো জাগিয়েছে।
এদিকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে রানীগ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে উন্নত প্রযুক্তিতে বাড়িটি নির্মাণে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে নেদারল্যান্ড সরকারের দুই গবেষক এবং বাংলাদেশের একজন বুয়েট গবেষক। বিশেষ প্রযুক্তিতে সিরাজগঞ্জে নির্মিত বাড়িটি বাংলাদেশে প্রথম বলা হচ্ছে। আরবানাইজিং ডেল্টাস অব দ্যা ওয়ার্ল্ড প্রকল্পের আওতায় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর বাংলাদেশ প্রজেক্ট এবং নেদারল্যান্ডসের আই এইচ ই ডেলক্ট কাজ করছে। এদের সহযোগিতায় সিরাজগঞ্জে বেসরকারি সংস্থা সার্প এর বাস্তবায়ন করে।
এই বাড়ি নির্মাণে নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার এবং বাড়িটি নির্মাণে যে খরচ হয়েছে তার পুরোটাই নেদারল্যান্ডসের ওই প্রজেক্ট বহন করেছে। বাড়ি নির্মাণে নেদারল্যান্ড থেকে আনা বিশেষ ধরনের ভাসমান শিট, স্থানীয় ককশিট, কাঠ ও টিন প্রয়োজন হয়েছে। বাড়িটি নির্মাণে খরচ পড়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা জানায়, স্থানীয় প্রযুক্তিতে বাড়িটি নির্মাণ করলে খরচ অর্ধেকের কম হবে।
বাড়ির মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘরটি তৈরির আগে যারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা যেমনটি বলেছিলেন তেমনটি করে ঘরটি তৈরি করা হয়নি। এখনও বসবাসের উপযোগী নয় এই বন্যামুক্ত বাড়ি। বাড়িটি পানিতে ভাসলেও, বৃষ্টির পানি সহজেই ঘরের মধ্যে চলে যায়। বন্যা আসার আগেই বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ না করে তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করা হয়েছে। কোনো ঘরেই নেই দরজা-জানালা।
পানির জন্য আলাদা মোটরের ব্যবস্থা থাকলেও এটি অন্যান্য জায়গায় সরবরাহের জন্য নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। আর এনজিওর কোনো এক কর্মকর্তা তাকে জানিয়েছেন, ঘরের দরজা-জানালা তাকেই তৈরি করে নিতে হবে। তিনি তা করতে নারাজ। কারণ উঁচু ভিটায় তার টিনশেড বিল্ডিং রয়েছে। যেখানে তিনি আরামেই আছেন। তবে বন্যার সময় আশপাশের মানুষ বন্যামুক্ত বাড়িতে এলে তিনি সেখানে তাদের থাকতে দেবেন। পাশাপাশি তিনি আশা করছেন খুব শীঘ্রই বাড়ির অন্যান্য নির্মাণ কাজগুলো শেষ করা হবে।
ভাসমান বাড়ি নির্মাণে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে (ছবি- দৈনিক অধিকার)
সার্পের নির্বাহী প্রধান মো. শওকত আলী জানান, আমাদের এলাকা বন্যাপ্রবণ। আর এই বন্যার সময় মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এই কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শাহ আলম খানের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসের প্রফেসর ক্রিস্টিয়ান জেভেনবার্গেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের প্রযুক্তি ও আর্থিক সহযোগিতায় এ বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এই বাড়ির স্থায়িত্ব প্রায় ৫০ বছর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, যদি সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানরা এগিয়ে আসেন তাহলে বানভাসি অসহায় মানুষের দুর্ভোগ অনেকাংশেই লাঘব হবে।
বুয়েটের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শাহ আলম খান বন্যা প্রতিরোধক উভচর বাড়ি তৈরির প্রযুক্তি এবং এর সুবিধা সম্পর্কে বলেছেন, বন্যা প্রতিরোধক উভচর বাড়ি তৈরি প্রযুক্তি বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো পরিচিত পেতে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো-বাংলাদেশে বন্যা আক্রান্ত জনগোষ্ঠী বন্যার কারণে যে আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতি হয় তা থেকে দ্রুত প্রতিকার করা।
তিনি জানান, বন্যা প্রতিরোধক উভচর বাড়ির সুবিধা হলো- এই বাড়ি বন্যার পানিতে ভেসে উঠবে এবং বন্যার পানি যখন সরে গেলে তা আবার যথাস্থানে প্রতিস্থাপিত হবে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েক মাস আগে আট শতক জায়গার ওপর নির্মিত প্রথম ২ হাজার বর্গফুট বাড়িটি তৈরিতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে পরবর্তী বাড়ি নির্মাণ ব্যয় প্রথম বাড়ির ব্যয় থেকে অনেকটা কমে যাবে।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড