• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাঙ্গামাটিতে সড়ক ধসের আশঙ্কা

  রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

১৭ আগস্ট ২০১৯, ০৯:১১
সড়ক
সড়ক ধস (ছবি : দৈনিক অধিকার)

রাঙ্গামাটি জেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক ধসে যে কোনো সময়ে সড়ক পথ যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি টানা ভারী বর্ষণে রাঙ্গামাটি জেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কে ধস দেখা দিয়েছে। এসব সড়ক ধসে যে কোনো সময়ে বড় বিপদ হতে পারে। বন্ধ হয়ে যেতে পারে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে সড়কের ধস ঠেকাতে রাঙ্গামাটি কাপ্তাই বাইপাস সড়কে হালকা যানবাহন চলাচলও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাঙ্গামাটি আসামবস্তি হয়ে কাপ্তাই সড়কে বেশ কিছু জায়গায় সড়ক ধসে পড়েছে। এসব সড়ক ধস ঠেকাতে সড়ক ও জনপথ নামে মাত্র গাছ দিয়ে পাইলিং করে যাচ্ছে। সড়ক ও জনপথ এবং এলজিইডির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি শহরের আসামবস্তি এলাকা থেকে কাপ্তাই সড়ক পর্যন্ত অনেক স্থানে এ ধরনের সড়ক ধস হয়ে যানবাহন চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও সড়কের দুই পাশে রয়েছে পর্যাপ্ত জঙ্গল যা যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। এসব জঙ্গল পরিষ্কার করা না হলে যে কোনো সময় বিপদ হতে পারে। অন্য দিকে এসব ঝাড়জঙ্গলের কারণে এ সড়কের দুই পাশে প্রায় সময় মানুষ আক্রমণকারী বন্যহাতি আশ্রয়স্থল খুঁজে পাচ্ছে। অনেকে বলেছেন এ সময়ে এ সড়কে বন্যপ্রাণির পদচারণা বেশি থাকে। তাই জরুরি ভিত্তিতে জঙ্গল পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সড়কের যাত্রী ফজল করিম বলেন, বর্ষা এলে সড়কের কাজ করে যার কারণে এসব সড়কের কাজ মজবুত হয় না। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, প্রতি বছর বর্ষা এলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এসব কাজের সঙ্গে জড়িত এলজিইডি, সড়ক ও জনপথের অসৎ লোকজন এবং প্রভাবশালী দলীয় লোকজনেরা।

২০১৭ সালের ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসের দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি বিবর্ণ রাঙ্গামাটি। ফলে আবার বর্ষা আসায় জনমনে তৈরি করেছে পাহাড় ধসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা। যে কোনো মুহূর্তে দুর্যোগে রাস্তাঘাটসহ নানা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে এখানকার মানুষ। সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৩ জুনের পাহাড় ধসে রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সড়কের সাপছড়ি শালবাগান এলাকায় মূল সড়কটি ধসে ১০০ মিটার গভীর খাদে পড়ে যায়। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কয়েক স্থানে ধসে যাওয়া অংশ সরেজমিন ঘুরে দেখে গেছে, সড়কের ভাঙনে গাছের খুঁটি দিয়ে পাইলিং দেওয়া হয়েছে। বস্তায় মাটি ভরে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এসব বস্তা আর খুঁটিকে সড়কের বিপরীত পাশ থেকে লোহার দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত বর্ষায় পানির প্রবাহে এসব মেরামত ধসে গেছে। রাঙ্গামাটি বাস মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, বর্ষার আগেই সড়কগুলো ঝুঁকিমুক্ত করা দরকার ছিল। যাতায়াতে মারাত্মক ভোগান্তি আর আশঙ্কায় বিগত ২০১৭ সালের ১৩ জুন সবচেয়ে বড় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে ছিল পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে। এতে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরের বছর জেলার নানিয়ারচরে পাহাড় ধসে ফের ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ দিকে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো আজও পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়। ফলে আবার সড়ক ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সদরসহ জেলার ৭ উপজেলা এবং পাশের দুই জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দবানের অন্তত ১০ লাখ মানুষ এসব সড়কের ওপর নির্ভরশীল। দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো গাছের খুঁটি আর মাটি ভরাট করে কেবল সাময়িক সংস্কার কাজেই ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। অথচ এসব টাকা খরচ করেও ঝুঁকি এড়ানো যায়নি।

দুই বছরেও ঝুঁকিমুক্ত হয়নি রাঙ্গামাটির পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো। ২০১৭ সালে ১৩ জুনের পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত হয় রাঙ্গামাটির সড়কগুলো। কিন্তু গত দুই বছরেও স্থায়ী মেরামত করা হয়নি এসব সড়ক। এ অবস্থায় বর্ষার শুরুর আগেই পাহাড় ধসে ভেঙে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলোর মেরামত ও সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন, জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ।

রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, কথা ছিল গত জুনের আগেই রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ১২৮টি স্থানে স্থায়ী মেরামত ও পুনর্নির্মাণ কাজ করতে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আজও তা ছাড় না পাওয়ায় এবারও বর্ষার আগে কাজ সম্পন্ন করার সম্ভাবনা আর নেই। সড়কগুলোর স্থায়ী মেরামত ও পুনর্নির্মাণে ১৭০ কোটি টাকার ডিপিপি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ে। ডিপিপি প্রস্তাবনায় জেলার বিভিন্ন সড়কের ১২৮ পয়েন্টে ৪ হাজার ৭২৫ মিটার পাইলসহ রিটেইনিং ওয়াল এবং স্লোপ প্রটেকশন নির্মাণ ও কিছু সরঞ্জাম ক্রয়ের প্রস্তাব রয়েছে। ওই সব প্রস্তাব ইতোমধ্যে পাশ হয়েছে। এছাড়াও এলজিইডির প্রায় ৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প পাশ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ওডি/এসজেএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড