ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রতি ঘণ্টা বা আধঘণ্টায় নয়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিনিটে মিনিটে চলে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলা। আর রাত নামলে সেটুকুও উধাও হয়ে যায়। কিছু কিছু এলাকায় দিনরাত মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টাই রয়েছে বিদ্যুৎবিহীন। গত মঙ্গল ও বুধবার বিদ্যুতের এই অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় কেটেছে নলছিটির ওজোপাডিকোর গ্রাহকদের। ওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির আওতায় থাকা পৌর এলাকায় ঈদের ছুটিতে গ্রামে আসা মানুষের পড়তে হয়েছে সীমাহীন লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায়। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে গ্রামে আত্মীয়-পরিজনের সান্নিধ্যে আসা স্বজনদের।
নলছিটি পৌরএলাকার ওজোপাডিকোর গ্রাহকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ তারা। দিনের বেলা প্রতি ঘণ্টায় তিন-চারবার বিদ্যুৎ যায়-আসে। কখনো এই লুকোচুরি মিনিটে মিনিটে চলে। বিশেষ করে গত দুই দিনে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। মঙ্গল ও বুধবার দিন রাত মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টা টানা বিদ্যুৎহীন কাটিয়েছেন তারা। এতে ঈদের ছুটিতে গ্রামে স্বজনদের কাছে আসা মানুষদের ঈদ আনন্দ ম্লান হয়েছে।
বুধবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অনেক স্থানে বিদ্যুৎ থাকলেও ভোল্ট না থাকার কারণে গ্রাহকদের ব্যবহৃত ইলেট্রনিক্স যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে আবার কেউ কেউ ফ্রিজে কুরবানির মাংস রাখতে পারেনি। এদিকে বিদ্যুৎ সমস্যার এ সীমাহীন যন্ত্রণার অভিযোগ করেও নাগরিক সেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
বৈচন্ডী আড়াপোল এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত একটানা বিদ্যুৎ ছিল না। আর আগের দিন রাতে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত দুইটা পর্যন্ত টানা বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল। দিনেও তাদের অসহনীয় লোডশেডিং সহ্য করতে হচ্ছে। এটা নজিরবিহীন।
নলছিটি শহরের বেসরকারি একটি ক্লিনিকের একজন মালিক বলেন, বেশির ভাগ ক্লিনিক-হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয় রাতের বেলা। বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর চালিয়ে কোনোরকমে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। কিন্তু জেনারেটরে কার্যক্ষমতা সীমাবদ্ধতা থাকায় কাজে ব্যাহত হয়। ফলে রোগীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।
পৌর এলাকার অনুরাগ গ্রামে ঢাকা ঈদ করতে আসা রহিম জোমাদ্দার বলেন, ঈদের দিন মোটামুটি বিদ্যুৎ ছিল। পরদিন থেকে দিনের বেলায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। নলছিটি বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করলে তারা বৃষ্টিতে লাইনের ক্ষতি হয়েছে তাই এমন সমস্যার কথা বলছেন।
নাঙ্গুলি-মাটিভাঙা গ্রামে ঈদের পরের রাত থেকে প্রায় ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এতে অনেকের ফ্রিজে থাকা কুরবানির মাংসও নষ্ট হয়ে গেছে। ওজোপাডিকোর স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, গাছ পড়ে বিতরণ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামত করতে সময় লাগছে।
পৌর শহরের আবাসিক-বাণিজ্যিক সবখানেই এখন বিদ্যুৎ নিয়ে এমন হতাশা শুরু হয়েছে। ভ্যাপসা গরমে আবাসিক এলাকার মানুষকে দুঃসহ যন্ত্রণায় পড়তে হচ্ছে। আবার বানিজ্যক গ্রাহকরাও বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ রাখছে তাদের প্রতিষ্ঠান।
এ ব্যাপারে ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলী ফিরোজ হোসনে সন্ন্যামত বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে নয় ৩৩৩ কেভির লাইনের ত্রুটির কারণে ঈদের পরদিন কিছু কিছু লাইনে বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল। আর বৈচন্ডী এলাকায় মঙ্গলবার বিকালে থেকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ ছিল কারিগরি ত্রুটি। আড়াপোল এলাকায় ট্রান্সফরমারের ডিক্স বিকল হওয়ায় ওই এলাকার গ্রাহকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিনের পুরোনো সোর্স লাইনে ত্রুটির কারণে নলছিটিতে প্রায়ই বিদ্যুৎ সরবরাহে এমন বিঘ্নিত ঘটছে। রাতের বেলা এমন ত্রুটি ঘটলে তা খুঁজে বের করতে হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া নলছিটি বিদ্যুৎ সরবরাহের জনবল সঙ্কট রয়েছে। অল্প জনবল নিয়ে হাজার হাজার গ্রাহকদের সেবা দেওয়া দুর্লভ ব্যাপার।
ওডি/এসজেএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড