যশোর প্রতিনিধি
স্ত্রী ও সন্তানদের স্বীকৃতি দিয়ে ১৪ বছর কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেলেন ঝিনাইদহর আলোচিত মোহাম্মদ ইসলাম মৃধা। স্ত্রী ও ছেলেকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। ইসলাম মৃধা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ মৃধার ছেলে।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) দুপুরে ইসলাম মৃধা যশোর কারাগার থেকে মুক্তি পান। এ সময় কারাফটকে উপস্থিত ছিলেন- তার বাবা, দুই বোন ও এক ভাই। তবে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকা ইসলাম মৃধার ছেলে মিলন ও স্ত্রী মালা উপস্থিত ছিলেন না।
ইসলাম মৃধার মুক্তির সময় তার স্ত্রী মালা এবং মিলন উপস্থিত থাকবেন এমনটা আশা করেছিলেন কারাকর্তৃপক্ষ। ইসলামের বাবা আব্দুল আজিজ বলেন, মিলন ও তার মা ঢাকায় থাকায় তারা আসতে পারেনি।
যশোর কারাগারের জেলার আবু তালেব জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৪ বছর ৬ মাস ২৯ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেলেন ইসলাম মৃধা। তার সাজা হয়েছিল ৩০ বছরের। সন্তান ও স্ত্রীকে মেনে নেওয়ার শর্ত সাপেক্ষে আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে ৩১ জুলাই যশোর কারাগারে তাদের ফের বিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর ঝিনাইদহ কারাগারে ইসলামের জামিন আদেশ পৌঁছালে সেখান থেকে যশোর কারাগারে পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী শুক্রবার তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ছেলেকে নিতে কারাফটকে আসা ইসলামের বাবা আব্দুল আজিজ মৃধা বলেন, ছেলেকে মুক্ত করতে পেরে আমি অনেক খুশি। ইসলামের ছেলেকে তারা অনেক আগেই মেনে নিয়েছেন। তবে পুত্রবধূ মালার পরিবারকে দায়ী করে তিনি বলেন, তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এত কিছু হতো না।
মিলন তার বাবাকে কেন নিতে আসেনি জানতে চাইলে আজিজ বলেন, সে তার মায়ের সঙ্গে ঢাকায় রয়েছে। তারা ঢাকা থেকে বাড়িতে আসবে।
জামিনে কারামুক্ত ইসলাম বলেন, সন্তান পরিবারসহ তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চান।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ইসলাম মৃধা প্রেম করে একই গ্রামের মালাকে বিয়ে করে। এরপর মালা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে ইসলাম তাকে অস্বীকৃতি জানায়। সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবি নিয়ে মালা ইসলাম মৃধার বাড়ি গেলে তাকে বের করে দেওয়া হয়। ২০০১ সালের ২১ জানুয়ারি স্বাভাবিক নিয়মে মালার পুত্রসন্তান প্রসব হয়। নাম রাখেন মিলন। মিলন ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মালার বাবা ইসলামের বিরুদ্ধে ২০০১ সালে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে। এরপর আদালতের নির্দেশে পুলিশ ইসলামকে আটক করে। কিন্তু ইসলাম আদালতেও মালা ও তার সন্তানকে অস্বীকার করেন। এ সময় মালার আবেদনের প্রেক্ষিতে ছেলে মিলনের ডিএনএ টেস্ট করা হলে তার পিতৃপরিচয় নিশ্চিত হয়।
আদালত ওই মামলায় ইসলামকে দোষী করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ইসলাম আপিল করলে রায় বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করলে সেখানেও ইসলামের সাজার রায় বহাল থাকে। পরে আপিল রিভিউ আবেদন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান ইসলাম।
ইসলামের করা রিভিউ শুনানিতে আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মালা ও মিলনের স্বীকৃতির বিষয়টি সামনে আনেন। এ সময় তিনি বলেন, বর্তমানে ইসলাম মালাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চায়। মিলনকে সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানকে নিজ বাড়িতে তুলে নিতে চায়। ইসলামের আইনজীবীর এই বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এক আদেশে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে কারাভ্যন্তরে ইসলাম ও মালার আবারও বিয়ে পড়ানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলারকে আগামী ২৯ আগস্ট এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এ বিষয়ে যশোর কারাগারের জেলার আবু তালেব বলেন, আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে ৩১ জুলাই কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার, দুপক্ষের আত্মীয়-স্বজন ও তাদের ছেলে মিলনের উপস্থিতিতে ইসলাম ও মালার বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের কাবিন উচ্চ আদালতে জমা দেওয়ার পর তার জামিন আবেদন মঞ্জুর হয়।
ওডি/এসএএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড