হুমায়ুন কবির সূর্য্য, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে। গত ৪ বছরের ভাঙনে এ ইউনিয়নের তিন ভাগের দুইভাগ এলাকা তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে গত দেড় মাস ধরে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও ভাঙন ঠেকানো যায়নি। গত এক সপ্তাহেই অর্ধ-শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিতদের অনেকেই খোলা আকাশে রোদ-জলে ভিজে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এদিকে নদী তীর রক্ষা বাঁধ থেকে মাটি কেটে জিও ব্যাগ ভরানোর অভিযোগ উঠেছে পাউবোর শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। ফলে সেই এলাকা দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
সরজমিনে ভাঙন কবলিত চতুরা ও কালিরহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খোলা আকাশে বেশ কয়েকটি বাড়ি পড়ে আছে। কালিরহাট এলাকার পঁচাশি বছরের বৃদ্ধা সোহাগী জানান, বাপ-মায়ে আদর করি নাম রাখছিল সোহাগী। স্বামীও চলি গেল; সেইসাথে সোহাগ-সুখও কাড়ি নিল তিস্তা নদী।
নারায়ণ চন্দ্র বর্মন (৬৩) ছুটে বললেন, ‘বাবারে ২০ বার বাড়ি ভাঙছি। হামরা এ্যালা (এখন) নি:স্ব হয়া গেছি। হামাকগুলার দেকপের (দেখার) কাঁইয়ো (কেউ) নাই। টেকা পয়সা নাই। জায়গাও কিনবার পাবার নাগছি না। হামরা পথের ভিখারী হয়া গেছি। সরকার হামারগুলার জন্য থাকবার জাগা করি দেউক।’
নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি (ছবি- দৈনিক অধিকার)
চতুরা এলাকার স্থানীয়রা জানান, এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত শ্রমিকরা বাঁধ নষ্ট করে মাটি কেটে জিও ব্যাগে ভরাচ্ছে। এখন এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের প্রশ্ন করা হলে তারা জানান, বাঁধ থেকে মাটি কেটে জিও ব্যাগ ভরা হচ্ছে। আবার ড্রেজার দিয়ে সেটা পূরণ করা হচ্ছে। বাঁধ থেকে মাত্র ৫০গজ দূরেই বসানো হয়েছে ড্রেজার। তাই দিয়েই মাটি পূরণের কথা জানালেন তারা।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, গত এক দশকে আমার ইউনিয়নের এক চতুর্থাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। আগে ভোটার ছিল ২৯ হাজার এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজারে। এগারটি মৌজার মধ্যে ৭টি মৌজা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বার হাজার ভোটার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। এখানে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। আমরা সরকারের কাছে এই এলাকার ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত স্থায়ী কাজ চাই।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের লোকজন কালিরহাট এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ করছে। কেউ বাঁধ কেটে মাটি ভরার কাজ করে থাকলে সেটা আমাদের জানা নেই। আমরা চর থেকে নৌকায় বালু এনে কাজ করছি। আর ড্রেজারের কাজ এখন বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, ভাঙন কবলিতদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার কাজ করছে।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড