রাজশাহী প্রতিনিধি
ঢাকার ট্যানারিগুলোতে পশুর চামড়া সরবরাহ করে এখন পর্যন্ত প্রাপ্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা বুঝে না পাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা। এ দিকে অনেকেই বিপাকে পড়ে ছেড়েছেন ব্যবসা। যারা টিকে আছেন তারাও নতুন করে অর্থিক লোকসানের ভয়ে বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন। ফলে কুরবানির ঈদ চলে আসলেও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এবার কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সূত্র মতে, রাজশাহী ও এর আশপাশে এবার প্রায় এক লাখ পশু কুরবানি হবে। আর সেই পশুগুলোর চামড়ার বাজার মূল্য হবে আনুমানিক ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার বেশি। গেল বছর এই বাজার ছিল প্রায় ১২ থেকে ১৩ কোটির সমপরিমাণ। রাজশাহীসহ বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের পশুর চামড়ার মান অন্য যে কোনো এলাকার চাইতে উন্নত হওয়ায় চাহিদাও বেশি।
রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের ১২৭ জন সদস্য স্থানীয়ভাবে বহুদিন থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে আসছেন। এর বাইরে প্রতি বছর কুরবানি ঈদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মৌসুমি ব্যবসয়ীদের দেখা মেলে। তবে নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রতিদিন এ সংখ্যা কমছে।
রাজশাহী জেলা থেকে গত বছর প্রায় ১০ কোটি টাকা সমমূল্যের কুরবানি দেয়া পশুর কাঁচা চামড়া দেশের সর্ববৃহৎ বাজার ঢাকার হেমায়েতপুরে অবস্থিত বিভিন্ন ট্যানারি কোম্পানিতে সরবরাহ করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত সেই টাকা পরিশোধ করেনি কোম্পানিগুলো। ফলে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা অর্থ সঙ্কটে ভুগছে।
আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে গত মঙ্গলবার সরকার থেকে পশুর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। প্রতি বর্গফুট গরুর চামাড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকায় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সরকারের নির্ধারিত এই মূল্য ব্যবসায়ীদের নতুন করে লোকসানে ফেলবে বলে জানিয়েছে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, এবার রোজার ঈদের পর মান ভেদে প্রতি পিস গরুর চামড়ার দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। তবে সরকার নির্ধারিত নতুন মূল্যের ফলে সেই একই মানের চামড়ার জন্য ব্যবসায়ীদের দাম গুণতে হবে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
এ দিকে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রচুর লবণের প্রয়োজন পড়ে। গেল কুরবানির ঈদে প্রায় ৭ থেকে ১০ হাজার বস্তা লবণ লেগেছিল। সেই লবণ ব্যবসায়ীরাও এবার স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের বাকিতে লবণ দেবে না বলে জানিয়েছে।
চামড়া ব্যবসায়ীদের লবণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জারজিস অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক জানান, গেল ঈদে লবণ বাকি দিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। তাই এবার প্রতিষ্ঠানটি কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের লবণ বাকিতে দেবে না।
রাজশাহী সপুরা এলাকার কাঁচা চামড়া আড়তের ব্যবসায়ী বাবু জানান, গত পাঁচ বছরে ঢাকার ট্যানারিতে ৩৫ লাখ টাকা বাকি পড়েছে। এ বছর তার নতুন করে বিনিয়োগের সামর্থ্য নেই।
তিনি আরও জানান, সপুরার আড়তটিতে প্রায় ৫০ জন ব্যবসায়ী ছিলেন। তবে লোকসানের কারণে এখন সেখানে মাত্র পাঁচজন ব্যবসা করছেন। বাকিদের অনেকে পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা ছেড়ে রিকশা চালাচ্ছে।
রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ কাঁচা চামড়া শিল্পের সার্বিক প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে জানান, কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের আর্থিক কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে লোন দেয়া হয় না। রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের ঢাকার ট্যানারিগুলোতে বাকি পড়ে আছে ১৫ কোটির বেশি টাকা। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা এবার ঈদে নতুন মাল নিতে অনিহা জানাচ্ছে শুরু থেকেই। এসব কারণে রাজশাহী জেলা কাঁচা চামড়া সংগঠনের ১২৭ জন ব্যবসায়ীর মধ্যে অধিকাংশই এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। এখন মাত্র ১০ থেকে ১৫ জন এ ব্যবসা করছে। এ দিকে সরকার মঙ্গলবার কাঁচা চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দিল তা এই শিল্প সংশ্লিষ্টদের আরও বিপাকে ফেলেবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার নতুন করে চামড়া সংগ্রহ করতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসা সংগঠনটির এই নেতা।
তিনি আরও জানান, হাজারীবাগ ট্যানারি স্থানান্তর করে হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সেখানে পরিবেশবান্ধব পরিবেশ ও পানি শোধনাগার হিসেবে পরিচিত ইটিপি স্থাপন করা হয়নি। এছাড়া নানা অবকাঠামো সঙ্কট রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চামড়ার চাহিদা কমে গেছে। ঢাকার ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে ক্রেতাদের কাছে এখনো গত বছরের মাল (চামড়া) পড়ে আছে। তাই এবার তাদের নতুন মালের চাহিদা নেই। আর বাজারে চাহিদা না থাকলে কাঁচামাল কিনে কী লাভ? এমনটাই প্রশ্ন রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীদের।
ওডি/এসজেএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড