• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের মুখে হাসি

  বরগুনা প্রতিনিধি

০৪ আগস্ট ২০১৯, ১৭:৫৪
বরগুনা
সাগর ও নদী থেকে শিকার করা ইলিশ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ না ধরার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। বিগত দুই সপ্তাহ ধরে বঙ্গোপসাগরে জাল ফেললেই উঠছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ। দক্ষিণাঞ্চলের বরগুনার জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পাথরঘাটা অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রতে (বিএফডিসি) ইলিশের ছড়াছড়ি। আর এসব ইলিশকে সাদা সোনা বলা হয়।

গত ১০-১৫ দিনে সকাল, সন্ধ্যা কিংবা রাতে গভীর সমুদ্রে মিলছে প্রচুর ইলিশ। ফলে ট্রলার বোঝাই করে মণে মণে ইলিশ নিয়ে ফিরছেন জেলেরা। বাজারে বা পাইকারের কাছে মাছ বিক্রি করে ফের ছুটছেন সমুদ্রে। এতে জেলেদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। আর এই ইলিশ ধরাকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠেছে মাছের বাজার ও আড়তগুলো।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মা ইলিশ রক্ষা এবং অবৈধ জাল বন্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে এত ইলিশ পাচ্ছেন জেলেরা। ইলিশের আগমনে জেলে পল্লীতে বইছে আনন্দের বন্যা। বিদেশে রপ্তানি করে আহরিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।

বরগুনা তালতলী পাথরঘাটা ও বেতাগী বিভিন্ন মৎস্য ঘাটের আড়তদার ও জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্রেতা বিক্রেতা, আড়ৎদার আর বেপারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলেদের মুখেও ফুটেছে হাসি। সঙ্কট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় জাল-নৌকা নিয়ে রাত-দিন নদীতে মাছ শিকার করছেন বরগুনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার জেলে।

জেলেরা জানায়, সমুদ্রের আবহাওয়া অনেক অনুকূলে। গভীর সমুদ্রে অনেক মাছ মিলছে। জাটকা বড়তে পরিণত হওয়ায় সাগর থেকে নদীতে চলে আসায় বিশখালী ও বালেশ্বর নদীতেও মিলছে বড় বড় ইলিশ। সে কারণেই জেলেদের জালে ধরা পড়ছে এসব রূপালি ইলিশ।

উজানের ঢল আর বৃষ্টিপাত বেড়ে গেলে মাছের উৎপাদন আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছে বরগুনার মৎস্য বিভাগ। এদিকে ইলিশ ধরা পড়লেও অভিযান নিয়ে কিছুটা চিন্তিত জেলেরা। নদীতে ডাকাতদেরও উৎপাত বাড়তে পারে বলে মনে করেন জেলেরা।

সরেজমিন দেখা যায়, নদী থেকে ঘাটে ভিড়ছে হাজার হাজার ট্রলার ও নৌকা। জেলেদের আহরণকৃত মাছ আড়়তে তুলে ডাক দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত দামে সে সব মাছ কিনে নিচ্ছেন আড়তদাররা। জেলেদের হাত থেকে আড়তদার সেখান থেকে পাইকার এবং বেপারীদের হাত ঘুরে এসব মাছ চলে যাচ্ছে ঢাকা, চাঁদপুর, যশোর, কাওরান বাজারসহ দেশের বড় বড় আড়তসহ বিদেশেও।

এ জন্য কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বরগুনা বাজারের জেলে, আড়তদার ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। কেউ ইলিশ মাছের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, আবার কেউ কেউ সেই প্যাকেট দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাকে।

এ মাছগুলোর দাম অনেক বেশি। এ নদীর মাছের প্রতি মন বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকা দরে এবং গভীর সমুদ্র থেকে যে ট্রলারগুলো আড়তে ফিরে আসে তারা ৭ থেকে ৮শ গ্রাম ওজনের ইলিশের প্রতিমণ বিক্রি হয় ১৮ হাজার টাকা করে। আবার ৪ থেকে ৫শ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয় ১২ হাজার টাকা মণ দরে। প্রায় প্রতিটি ট্রলারেই প্রতি ট্রিপে ৪ থেকে ৮ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।

আল্লার দান মৎস্য আড়তের মালিক যুগল কর্মকার জানান, ৬৫ দিন অবরোধ থাকায় এ মৌসুমে অনেক টাকার লোকসান দিয়েছি। গত ৩ থেকে ৪ দিনে মৎস্য আড়তগুলোতে এখন প্রচুর পরিমাণ ইলিশ বেচা-কেনা হয়েছে। এখন যে রকম মাছ জেলেদের জালে ধরা পরতে শুরু করেছে তাতে মনে হয় পিছনের ধার দেনা শোধ করে উঠতে পারবে।

পাথরঘাটা এলাকার জেলে মো. লোকমান মাঝি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে নদীতে মাছ ধরা পড়ছে, সকালে ছয় ঝুড়ি মাছ বিক্রি করেছি।

অন্য জেলেরা বলেন, এতদিন নদীতে মাছ ছিল না, তাই আমরা অনেক হতাশার মধ্যে ছিলাম। অনেক ঋণ হয়েছে, আশা করি এবার মাছ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।

বরগুনার মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, বিগত সময়ে মা ইলিশ রক্ষায় এবার অনেক ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। পাথরঘাটার বিএফডিসি ঘাট জেলে, ট্রলার মালিক পাইকার এবং আড়তদারদের আনাগোনায় মুখরিত। দম ফেলার সুযোগ নেই তাদের। দিনরাত চলছে ইলিশের বেচা-কেনা। দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠানো হচ্ছে ট্রাক বোঝাই ইলিশ।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় এবার জলদস্যুদের আক্রমণের ঘটনা নেই বললেই চলে।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং অফিসার মো. আহম্মেদ উল্যাহ মুঠোফোনে জানান, গত ৪ দিনে গড়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪২ টন ইলিশ মাছ বেচাকেনা হয়েছে। এভাবে ইলিশসহ অনান্য মাছ উঠলে জেলেদের মুখে যেমন হাসি ফুটবে তেমনি সরকারি কোষাগারেও প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব জমা হবে।

বেতাগী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোস্তফা আল রাজিব দৈনিক অধিকারকে বলেন, ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন সময়ে বেতাগীর জেলেরা ইলিশ শিকার থেকে বিরত থেকেছেন। এ জন্য বেতাগী উপজেলা মৎস্য দফতর ইলিশ রক্ষায় মডেল হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জাতীয়ভাবে পুরস্কারও পেয়েছেন। আর যথাসময়ে ইলিশ রক্ষার কারণেই বর্তমানে নদী ও সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ ধরা পড়ছে। সরকারি যে কোন নির্দেশ বেতাগী উপজেলার মৎস্যজীবী পালন করবে সে আস্তা রয়েছেন বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য ,মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় সিনিয়র মহাপরিচালক আজিজুল হক বলেন, বরিশাল বিভাগে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৭২৪ জন জেলে রয়েছেন। যার মধ্যে প্রায় দুই লাখ জেলে সাগরে ইলিশ ধরেন বলে মনে করেন মৎস্য কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ভোলার ১ লাখ ৭৭ হাজার, পটুয়াখালীর ৬৪ হাজার ৭৭৭ জন, বরগুনার ৩৯ হাজার ৮০০ জন ও পিরোজপুরের ৮ হাজার ২৩০ জন জেলেকে সরকারি প্রণোদনার অংশ হিসেবে প্রতি জনকে ৪০ কেজি করে মোট ৮৬ হাজার মেট্রিক টন চাল দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এবার প্রথমবারের মত সাগরে মাছের প্রজনন, প্রজননের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি, প্রজননের পরে ডিম, রেনু, ছোট মাছের নিরাপত্তা, বেড়ে ওঠার সুযোগ ও সাগরে মৎস্য সম্পদের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০ মে থেকে ৬৫ দিন সাগরে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ ছিল।

ওডি/এমবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড