নিজস্ব প্রতিবেদক
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বটতৈল মৌজায় জেলা পরিষদের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা কথিত প্রামানিক সুপার মার্কেট অবৈধভাবে দখল করে জোরপূর্বক বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলার মামলায় পুলিশি তদন্তে কোন প্রমাণ মেলেনি।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) এ কে এম জহিরুল ইসলাম সরেজমিন তদন্ত পূর্বক গত ২৪ জুলাই বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের (কুষ্টিয়া সদর) কাছে এ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
জানা যায়, জেলা পরিষদের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা কথিত প্রামানিক সুপার মার্কেটের মালিক বলে দাবিদার মো. রাকিবুল ইসলাম সম্প্রতি বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন।
বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) এ কে এম জহিরুল ইসলাম সরেজমিন তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) এ কে এম জহিরুল ইসলাম সরেজমিন তদন্ত পূর্বক গত ২৪ জুলাই বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের (কুষ্টিয়া সদর) কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
বিজ্ঞ আদালতের কাছে দাখিল করা ওই প্রতিবেদনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) এ, কে, এম জহিরুল ইসলাম বলেছেন তিনি সরেজমিন তদন্ত কালে স্থানীয় এলাকাবাসী, মামলার এজাহারে বর্ণিত সাক্ষী মার্কেটের ১২জন দোকানদার, পার্শ্ববর্তী দোকানদার ও কর্মচারীসহ অনেকের সাথে কথা বলেন। এবং সাক্ষীদের বক্তব্য ও জবানবন্দী প্রকাশ্য ও গোপনে রেকর্ড করেন।
প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন যেহেতু নতুন ও পুরাতন সকল দোকানদারগণ পূর্বেই ভাড়া দোকান ছেড়ে দিয়েছেন, তাই তাদের মালামাল নষ্ট বা খোয়া যায়নি। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৬ জুন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই জমির দখল ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের বিষয়ে জানিয়ে জেলা পরিষদের অন্যান্য বেদখলকৃত জমিও ওই অফিসে যোগাযোগের মাধ্যমে লিজ নেওয়ার অনুরোধ জানান। জেলা পরিষদ কুষ্টিয়ার ইজারাকৃত জমির স্থাপনা উচ্ছেদের সময় পাকা দালান ভবন প্রামানিক সুপার মার্কেট ভেঙে ফেলার সময় মামলায় উল্লিখিত ঘটনাস্থলে বর্ণিত অপরাধসমূহের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিবাদীগণকে অত্র মামলায় অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করা হলো।
প্রসঙ্গত, জেলা পরিষদের প্রায় ২৫ শতক কোটি টাকা মূল্যের সরকারি এই জায়গায় দ্বিতল মার্কেট নির্মাণ করে বছরের পর বছর ধরে ভাড়া আদায় করে আসছিল চক্রটি। ফলে সরকার প্রতি বছর বিপুল অংকের রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। দীর্ঘ দিন পরে হলেও অবশেষে গত ১০ জুন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ দখলদারদের কবল থেকে ওই সম্পত্তি উদ্ধার করে। জেলা পরিষদ সরকারি এই সম্পত্তি শুধু দখল মুক্তই নয় সেই সঙ্গে এই জায়গা থেকে সরকার যাতে রাজস্ব আহরণ করতে পারে সেজন্য উক্ত জায়গা দখল মুক্ত করার পাশাপাশি যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের অন্যতম পোলট্রি ও মৎস্য ফিস উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এনবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অনুকূলে ইজারা প্রদান করেছে।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া-শালঘর মধুয়া/ঝিনাইদহ রাস্তার/নয়নজুলির আর এস দাগ নম্বর ২০২৮ জে এল নং-৪১ মোট ০ দশমিক ৯৫ একর জমি দীর্ঘদিন ধরে হরিশংকরপুর এলাকার মৃত আনোয়ার আলীর ছেলে রাকিবুল ইসলাম দোতলা মার্কেট নির্মাণ করে ভোগ দখল করে আসছিল। জাল দলিল পত্র তৈরি করে রাকিবুল ইসলাম সরকারি এই সম্পত্তি ক্রয় সূত্রে মালিক বলে দাবি করে বছরের পর বছর ভোগ দখল করে আসছিল। মহামান্য হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মহাসড়কের আশে পাশের ১০ মিটার জায়গার মধ্যে কোন প্রকার হাট বাজার বসানো কিংবা কোন ধরণের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু মহামান্য হাইকোর্টের এই নির্দেশনা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে রাকিবুল ইসলাম দোতলা মার্কেট নির্মাণ করে ভোগ দখল করে আসছিল। এ ব্যাপারে হাইকোর্ট থেকে তার প্রতি সমন জারি করা হলেও আইন-আদালতের তোয়াক্কা না করেই সে সরকারি এই সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছিল। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ রাকিবুল ইসলামের দখলে থাকা এই সরকারি সম্পত্তি দখল মুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। জেলা পরিষদের নোটিশের প্রেক্ষিতে ওই মার্কেটের ভাড়াটিয়ারা প্রায় ৬ মাস আগেই তাদের ঘর ছেড়ে দেয়। সব ভাড়াটিয়ারা ঘর ছেড়ে দিলেও সরকারি এই মূল্যবান সম্পত্তি রাকিবুল ইসলাম জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর না করে নানা টালবাহানা করতে থাকে।
জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল আজম, সার্ভেয়ার মনিরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ গত ১০ জুন উপস্থিত থেকে জায়গাটি দখলমুক্ত করে। একই সঙ্গে উক্ত জায়গা থেকে যাতে সরকারি রাজস্ব আহরিত হয় সেই লক্ষ্যে গত ৩ জুন উক্ত সম্পত্তি দেশের অন্যতম পোল্টি ও মৎস্য ফিস উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান কে এন বি এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামানের অনুকূলে জেপ/কুষ/১৯/২০৫ নং স্মারকে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সী মো. মনিরুজ্জামান বাৎসরিক ১,০৮,৯০০ টাকা খাজনা গ্রহণ পূর্বক ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের জন্য ইজারা প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, মামলায় কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সী মো. মনিরুজ্জামান, সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল আজম, সার্ভেয়ার মো. মনিরুজ্জামান প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহিনুজ্জামান শাহীন ও কে এন বি এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামানকে আসামি করা হয়। বাদী অভিযোগ করেন গত ১০ জুন আসামিরা ষড়যন্ত্র করে তার স্বত্ব দখলীয় সম্পত্তি ও মার্কেট অবৈধ অনুপ্রবেশ করে মার্কেট এবং দোকানের প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল চুরিসহ প্রায় দুই কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করেছে।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড