• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৪০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুরবানিকে সামনে রেখে ঠুং-ঠাং শব্দে মুখরিত কামারপট্টি

  এইচ এম. কাওসার মাদবার, বরগুনা

০২ আগস্ট ২০১৯, ১৪:৫৬
কামারপট্টি
কুরবানি ঈদের আগে ব্যস্ত কামার শিল্পীরা ( ছবি : দৈনিক অধিকার)

আগামী ১২ এপ্রিল পবিত্র ঈদু-উল-আযহার (কুরবানির ঈদ) সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে দিন-রাত কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন বরগুনার কামার শিল্পীরা। তাই কামার শিল্পীরা কাক ডাকা ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত ঠুং-ঠাং শব্দে মুখরিত হচ্ছে বরগুনা জেলার কামার পট্টিগুলি।

আর মাত্র কয়েক দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আযহা। কুরবানি ঈদে গরু, ছাগল, উটকে কোরবানি পশু হিসেবে জবাই করা হয়। এসব পশুর মাংস কাটতে দা-বটি, ছুরি-ছোরা, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য। তাই কাজের ব্যস্ততা বেড়েছে কামার শিল্পীদের। হারিয়ে যেতে বসা বাংলার প্রাচীন কামার শিল্পে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এখন দম ফেলারও ফুরসত নেই তাদের। দিনে ও রাতে সমান তালে লোহার টুং-টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে বরগুনার উপজেলার প্রতিটি কামারের দোকানগুলো।

বরগুনা জেলা বিভিন্ন হাট বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, যেমন বরগুনা সদর,আয়লা বাজার, গৌরিচন্না বাজার, তালতলী সদর, পচাকোড়ালিয়া, ছোটবগি ,আমতলী সদর, গাজীপুর বাজার, চুনাখালি বাজার, বেতাগী বাজার, চান্দুখালি বাজার, কুমরাখালি বাজার,বামনা সদর, নতুন বাজার, পূর্ব সফিপুর ও পাথরঘাটাসহ গুরুপ্তপূর্ণ বাজারগুলো কামাররা দেশী প্রযুক্তির দা, কুড়াল, বোটি ছোট বড় চাকু, ছোড়া ও কাটারী বানাতে ও ঈদের বাজার ধরতে তাদের এই কর্মব্যস্ততা।

হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ইতোমধ্যেই গ্রামের লোকজন গরু, মহিষ, ছাগল জবাই ও মাংস কাটা কাজের জন্য কামারদের কাছে দা-বটি চাপাতি কিনছেন আবার কেউ বানানোর জন্য অর্ডার দিচ্ছেন।

বরগুনা জেলা বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে কামারদের তৈরি দা-বটিসহ ধারালো ( ছবি: দৈনিক অধিকার)

এসব ব্যবহার্য সরঞ্জামাদী স্থানীয় বাসিন্দা ও কসাইদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্নস্থানের পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসে নিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান আধুনিক সরঞ্জামাদির প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আযাহাকে সামনে রেখে প্রতি বছর জেগে ওঠে কামারপট্টি।

আধুনিকতার উৎকর্ষতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নানাবিধ সমস্যার কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের গ্রাম-বাংলার মানুষের প্রিয় শিল্পটি। এক সময় বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক কর্মকার পরিবার থাকলেও তাদের তৈরি পণ্য সামগ্রী প্রযুক্তির ছোঁয়ার কাছে টিকে থাকতে না পারাই বেশকিছু পরিবার তাদের পৈত্রিক পেশা ছেড়ে পরিবারের অভাব-অনটন ও চাহিদার তাগিদে লাভজনক অন্য পেশায় চলে গেছে।

আমির হোসেন নামে এক ক্রেতার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ঈদের আর বেশি বাকি নেই তার জন্য এখনই মাংস কাটার সামগ্রী কিনে রাখলাম। এদিকে ঈদে এলে লোহার দাম না বাড়লেও কয়লার দাম বাড়িয়ে দেয় অসাধু কিছু ব্যবসায়ীরা। কোরবানির ঈদের সময় তাদের তৈরি সরঞ্জামাদির চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে যায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বরগুনা বাজারের কামার শিল্পী দিপক জানান, আগে সবসময় কামারদের প্রচুর কাজের চাপ থাকতো কিন্তু বর্তমানে বিশেষ সময় তাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে দা-বটি-চাপাতি তৈরি করার ফলে তাদের হাতের তৈরি অস্ত্রের প্রতি মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে।

আমতলী উপজেলা শ্যাম কর্মকার বলেন, লোহা পিটিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা আমার পেশা, বাপ-দাদার পৈত্রিক সূত্রে আমি এই পেশায় জড়িত। একটি মাঝারি ধরনের দা ও কাটারি তৈরি করে ওজন অনুযায়ী ৩শ টাকা থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সারাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে যে কয়টি জিনিস তৈরি করি তা বিক্রয় করে খুব বেশি লাভ না হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থে আদি এই পেশা আমি ধরে রেখেছি।

বেতাগী কামার শিল্পী নিতাই কর্মকার জানান, পূর্ব পুরুষেরা একাজ করেছে বিধায় এখনও তিনি এ পেশাকে ধরে রেখেছেন। তিনি আরো জানান, ঈদকে সামনে রেখে স্থানীয় বাসিন্দা ও কসাইদের কাছ থেকে অর্ডার নেওয়া ছাড়াও পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রচুর কাজের অর্ডার পেয়েছেন। তাই গত দুসপ্তাহ থেকে তিনিসহ তার দোকানের তিন কর্মচারী ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড