হেলাল হোসেন, মাগুরা প্রতিনিধি
ইতিহাস সমৃদ্ধ জেলা মাগুরা। এখানে রয়েছে রাজা সীতারাম রায়ের প্রসাদ দূর্গ, দেবল রাজার গড়, কেশ সাগর, শ্রীপুর জমিদার বাড়ি, শ্রীপুর কবি কাজী কাদের নওয়াজের বাড়ি, কবি ফারুক আহম্মেদ, আধারকোঠা সিদ্ধেশ্বরী মঠ ও প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন ভাতের ভিটা। এ ছাড়াও রয়েছে অনেক প্রাকৃতিক নির্দশন যা মাগুরার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। ভাতের ভিটা একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন। ভিটা বলতে এখানে টিলা বোঝানো হয়েছে। টিলা শব্দের অর্থ উঁচু ডিবি। উচ্চতার কারণে এই গ্রামের নাম হয় টিলা। টিলা গ্রামের পূর্ব নাম ছিল ভোমরদা। কথিত আছে প্রাচীন সময়কালে মাগুরা জেলাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যায় প্লাবিত হয় যার কারণে দেশের অধিকাংশ গ্রাম বন্যায় তলিয়ে যায় কিন্তু এই গ্রামটি উঁচু হবার কারণে বন্যার হাত থেকে রক্ষা পায়। তখন থেকেই এই গ্রামটি টিলা গ্রাম নামে পরিচিতি লাভ পায়।
এই টিলা গ্রামে মোট ১২টি জাতির বসবাস ছিল বলে জানা যায়। তার মধ্য উল্লেখযোগ্য ছিল- কামার, কুমার, তাঁতি, ধোপা, নাপিতসহ আরও বেশ কয়েকটি জাতি। গ্রামের অধিকাংশ স্থানজুড়ে ছিল কুমারদের বসবাস। তারা মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পাত্র তৈরি করতেন যার ধংসাবশেষ এখনো গ্রামটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
মাগুরা সদর উপজেলা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বয়ে গিয়েছে ফটকি নদী। এই নদীর উওর তীরবর্তী টিলা গ্রামে অবস্থিত এ প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন ভাতের ভিটা। মানুষের মুখে প্রচলীত, প্রাচীনকালে এখানে অত্র অঞ্চলের শাসন ব্যবস্থার বিচারলায় ছিল এবং শাসক তার পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করতেন। যেটি গড়ে উঠেছিলো ৩শ ২১ খিস্টপূর্বে যা ছিল মৌর্য সাম্রাজ্যের শাসনকাল। রাজা তার শাসন কাজ পরিচালনা করার জন্য অসংখ্য সৈন্য ও গুপ্তচর বাহিনী তৈরি করেছিলেন এবং অপরাধিদের সাজা দেবার জন্য টিলা গ্রামের পশ্চিমে উঁচু একটি স্থান নির্মাণ করেছিলেন। স্থানীয়ভাবে সেই স্থানটির নাম এখন ছোট টিলা নামে পরিচিত। রাজা বহমান ফটকি নদীর তীরে গড়ে তুলেছিলেন স্নান ঘাট। ঘাটে যাবার জন্য মাটির নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরী করেছিলেন তিনি।
প্রায় এক দশক আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ভাত ভিটাটির খনন কাজ করেন। সেখানে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের স্থাপত্যশৈলীর অনুরুপ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রায়ত বহুকক্ষ বিশিষ্ট ইমারতের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। ভাত ভিটার ডিবি থেকে ৫০০ মিটার দূরে খনন করতে গিয়ে ৪ ফুট লম্বা একটি হাত পাওয়া যাই যা মৌর্য শাসন আমলের প্রত্নতাত্ত্বের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। সরকারিভাবে এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হলেও পরে তা আরও বেশি দূর এগোয়নি। তবে এখন ভাত ভিটা চিনবার কোনো সাইনবোর্ড বা স্মৃতি ফলক নেই। তবে এটি মাঝে মাঝে জুলেখা নামের এক জন দেখভাল করেন বলে জানা যায়। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে সেখানে একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে এটি ভাতের বাড়ি নামে পরিচিত। তারা বিশ্বাস করেন এটি জ্বীনদের কাজ এবং তারাই এটি তৈরি করতে চেয়েছিল।
টিলা গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, এ ভাতের ভিটায় অনেকেই মান্নোত করতেন এবং যেকোনো রোগ বিয়াদ্দী মান্নোতের পর নাকি সেরে যেত। তবে এখন আর তেমন কোনো লোক দেখা যায় না।
স্থানীয় এলাকাবাসির দাবি, এই স্থানটির গুরুত্বপূর্ণ হলেও অবহেলায় আজ এটি ধংস স্তুপে পরিণত হয়েছে। তারা মনে করেন দ্রুত সময়ের মধ্য সংরক্ষন করতে না পারলে এর স্মৃতি চিহৃ টুকু খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা জানান, প্রায় এক দশক আগে এই স্থানটি প্রত্নতাত্ত্বিকরা খনন করেছিল। এখন এটার বিভিন্ন স্টাকচারগুলো মাটি চাপা দিয়ে রাখা আছে। তবে খনন করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছর বা আগামী বছরেও এ স্থানটির খনন করা হবে কিনা জানা নেই।
মাগুরা সদর উপজেলার মঘি ইউনিয়নের টিলা গ্রামটিতে এ প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন ভাত ভিটাটি অবস্থিত। মাগুরা শহরের ভায়না মোড় থেকে যশোর রোড হয়ে ১২ কিলোমিটার পরে মঘিঢাল নামক স্থানে নেমে পশ্চিম দিকের আঞ্চলিক সড়ক হয়ে ২ কিলোমিটার পরেই এর অবস্থান। যেকোনো পরিবহন বা অটোযোগে এখানে যাওয়া সম্ভব।
ওডি/এসজেএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড