• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লাইনের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ট্রেন, ছুটছে ঝুঁকি নিয়ে

  রাজু আহমেদ, রাজশাহী

২৩ জুলাই ২০১৯, ১৮:১১
রেল লাইন
ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি ট্রেন চলছে এ রুটে (ছবি- দৈনিক অধিকার)

রেল লাইনের (রেল ট্র্যাক) ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে রাজশাহী রুটে। রেল কর্তৃপক্ষের বলছে, যাত্রীদের চাহিদা পূরণ করতেই অতিরিক্ত ট্রেন চালু করা হয়েছে। আর উদাসীন রেল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই চাহিদা পূরনের নামে তাদের জীবনকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, ধারণ ক্ষমতা অনুসারে বর্তমানে প্রতিদিন ২২টি ট্রেন রাজশাহী রুটের রেল লাইনের ওপর দিয়ে চলাচলে সক্ষম। তবে সেই লাইনে বর্তমানে ৫০টি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে। এর মধ্যে রয়েছে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন।

বহুদিন স্থায়ী কোনো সংস্কার কাজ না হওয়ায় এ রুটের লাইনের অনেক স্থানই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকির কারণে এ রুটের ট্রেনের গতিবেগ কমিয়ে মাত্র ৭৫ কিলোমিটার করা হয়েছে। ফলে বাইরের দেশ থেকে আনা দ্রুত গতির বগিগুলোর প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না যাত্রীরা।

রাজশাহী স্টেশন (ছুবি- দৈনিক অধিকার)

লাইনের অনুপাতে ট্রেনের সংখ্যা বিশে হওয়ায় ট্রেনগুলোকে পাসিং এর জন্য স্টেশনের বাইরে বিভিন্ন স্থানেই যাত্রা বিরতি করতে হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন কাঙ্ক্ষিত সোবা নিশ্চিত হচ্ছে না, তেমনি যাত্রীরা না জেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেলে ভ্রমণ করছেন।

রাজশাহী-আব্দুলপুর রুটের গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ এই রেল লাইন সর্বশেষ ২০০১ সালে সংস্কার করা হয়। তবে দীর্ঘ ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এই রুটের স্থায়ীভাবে লাইন সংস্কার না করায় পুরাতন লাইনে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক লাইনে পর্যাপ্ত পাথর নেই, স্লিপারগুলো পুরাতন, ট্রেন লাইন ধরে রাখার ক্লিপগুলো (ডগ স্পাইক) উপড়ানো। আর দুর্বল লাইনগুলোতে কোনো মতে প্রাথমিক পর্যায়ের সংস্কার কাজ করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে রাখা হচ্ছে, যা স্থায়ী কোনো সংস্কার নয়।

রাজশাহী তথা পশ্চিমাঞ্চল রেল রুটে প্রায় ১ হাজার ৫শ পুরাতন ব্রিজ রয়েছে। প্রতি কিলোমিটারে গড়ে একটি করে ব্রিজ। আর এই ব্রিজগুলোর অধিকাংশই পাকিস্তান আমলে নির্মিত। স্বভাবতই ব্রিজগুলো পুরাতন হয়ে পড়েছ। সেই ব্রিজগুলোর উপর রেল লাইন সংস্কারের নামে বাঁশের বাতা ও পেরেক পুতে রাখা হয়েছে। তবে এগুলো কারিগরি পদ্ধতিতে সংস্কার নয় বলে স্বীকার করেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী।

এদিকে এই রুটের লাইনের এমন দুরাবস্থার করণে ট্রেন দুর্ঘটনা আগের চাইতে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১০ জুলাই তেলবাহী একটি ট্রেন তেল ভর্তি ৩১টি বগি নিয়ে রাজশাহী স্টেশনের অদূরে চারঘাট এলাকায় লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় ২৮ ঘন্টা রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এর মাত্র চার মাস আগে ১১ মার্চ রাতে রাজশাহী স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা যাত্রি বোঝাই মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেন হরিয়ান স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়।

বাঁশ দিয়ে স্লিপান আটকে রাখা হয়েছে (ছবি- দৈনিক অধিকার)

রেল কর্তৃপক্ষের প্রথমিক তদন্তে দুটো দুর্ঘটনাই লাইনের ত্রুটির করণে ঘটেছে বলে স্বীরকার করেছে সংশ্লিষ্টরা। ট্রেন দুর্ঘটনার ধারাবাহিকতার কারণ দেখিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলের একজন প্রকৌশলীকে বদলী করা হয়েছে এবং অপর এক প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খোন্দকার শহীদুল ইসলাম দৈনিক অধিকারকে জানান, প্রতিবছর রেলের যাত্রী সংখ্যা ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রেলের প্রতি যাত্রীদের আস্থা আছে বলেই যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। এই বাড়িতি চাহিদার কথা মাথায় রেখে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল রুটে নতুন তিনটি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। সামনের দিনে আরও একটি নতুন ট্রেন চালু করা হবে। বর্তমানে যাত্রী চাহিদার কারণে রাজশাহী রুটে ট্রেন লাইনের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। যেখানে এই লাইনে ২২টি ট্রেন চলার সক্ষমতা রয়েছে, সেখানে বাধ্য হয়েই আমরা ৫০টি ট্রেন চলাচল করাচ্ছি। অবশ্য দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেনের গতি কমানো হয়েছে।

তিনি জানান, রাজশাহী আব্দুলপুর রুটে নতুন একটি লাইন করা হবে। রেল মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। আশা করছি এই লাইনটি চালু করতে পারলে পশ্চিমাঞ্চল রুটের যাত্রীদের দুর্ভোগ আর থাকবে না। সরকার রেলের যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর।

ওডি/এসএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড