মো. মুমীদুজ্জামান জাহান, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও গবাদি পশু নিয়ে এলাকাবাসীর একটুও দুর্ভোগ কমেনি। বাঁধে আশ্রিত শত শত গরু আর মানুষ এক সঙ্গে খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টানিয়ে বাস করছে। এতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
সোমবার কৈজুরি ইউনিয়নের জগতলা এলাকার নতুন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে কৈজুরি ইউনিয়নের জয়পুরা থেকে জগতলা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার নতুন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গবাদি পশু নিয়ে আশ্রিত মানুষ এমন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। শত শত মানুষ তাদের শিশু সন্তানের পাশাপাশি গবাদি পশু নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। সাধ্যমত কেউ পলিথিন টানিয়ে, কেউ টিনের চালা বানিয়ে, কেউ আবার একেবারে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। তাদের ভাগ্যে এখনো পর্যন্ত জোটেনি কোনো ত্রাণ সহায়তা।
মানুষ তাদের শিশু সন্তানের পাশাপাশি গবাদি পশু নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন (ছবি : দৈনিক অধিকার)
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুসেইন খান জানান, বাঁধে আশ্রিতদের জন্য দুই মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ এলাকাবাসীর দাবি, এখন পর্যন্ত তাদের কোনো ধরনের ত্রাণ সহায়তা তো দূরে থাক প্রশাসনের কোনো কর্তা ব্যক্তিই খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেয়নি।
এ বিষয়ে জগতলা বাঁধে আশ্রয় নেওয়া ভোলা ব্যাপারীর ভাই সেলিম হোসেন (২০) জানায়, বন্যায় বাড়িঘরে পানি ওঠায় নিরুপায় হয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে ১২টি গরু নিয়ে নতুন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। একইভাবে ওই এলাকার নাসিন উদ্দিনের (৬৫) তিনটি গরু ও তিনটি ছাগল, আলাউদ্দিনের (৫৪) তিনটি গরু, রজিনা খাতুন (২৪) তিনটি গরু, হাঁস-মুরগী ও দুটি ছাগল, জালাল উদ্দিনের (৬০) দুটি গরু, আলামিন হোসেনের (৩০) চারটি, নজির মোল্লার (৫৫), তিনটি গরু ও আবু বক্কারের (৫০) চারটি গরু নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোনো ত্রাণ সহায়তা।
বাঁধ ঘুরে দেখা যায়, বন্যায় হত দরিদ্রদের পাশাপাশি অবস্থা সম্পন্ন গরু ব্যবসায়ীরাও বাড়িঘর বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় একেক জন ১০/১২টি থেকে শুরু করে ২০/২৫টি গরু নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব গরু আসন্ন কুরবানির ঈদে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পশুরহাটে নিয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
গরু আর মানুষ এক সঙ্গে খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টানিয়ে বাস করছে (ছবি : দৈনিক অধিকার)
এদের মধ্যে আলমাস আলী ও মোজাম্মেল হক জানান, পানির মধ্যে গরুগুলোকে দাঁড় করিয়ে রাখতে না পেরে বাধ্য হয়ে বাঁধে এসে আশ্রয় নিয়েছি।
ভোলা ব্যাপারি জানান, বন্যার কারণে এরই মধ্যে পানির দরে ১২টি গরু বিক্রি করে দিয়েছি। এখনও ২২টি গরু রয়েছে। তার মধ্যে ১২টি গরু নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। রহম আলী জানান, তিনি ১৪টি গরু নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
অপরদিকে জামিরতা গ্রামের হাজী জহুরুল ইসলাম জানান, বন্যার কারণে আটটি গরু মাত্র সাড়ে ২৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। কুনবানির হাটে নিয়ে এগুলো বিক্রি করলে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা। এ পারমাণ টাকা বন্যার কারণে আমার লোকসান হয়েছে।
এ বিষয়ে কৈজুরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, বন্যাদুর্গতদের জন্য মাত্র পাঁচ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। চাহিদার তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। এর মধ্যে আগে যমুনা নদীর চরের বানভাসীদের মধ্যে বিতরণ শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাঁধে আশ্রিতদেরও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড