• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নুর আলমের স্বপ্নের ‘কুটিরশিল্প’ পুড়ে ছাই

  রাকিব হোসেন আপ্র, লক্ষ্মীপুর

২১ জুলাই ২০১৯, ২০:২৭
নুর আলম
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে স্তব্ধ নুর আলম (ছবি- দৈনিক অধিকার)

দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তিল তিল করে যে কুটিরশিল্প গড়ে তুলেছেন লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের হাজিরপাড়া ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামের বাসিন্দা নুর আলম (৬০) তা এখন আর নেই। এক অগ্নিকাণ্ডে তার সবই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সব হারিয়ে এখন প্রায় নিঃস্ব কুটিরশিল্পের এই কারিগর। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে কে জানতো!

নুর আলমের কুটিরশিল্পে ছিল প্রায় ১০১ ধরনের বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র। মাগুরা, কুমিল্লা, যশোর ও লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব জিনিসপত্র পাইকারি দরে ক্রয় করতেন তিনি। তবে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় নুর আলম নিজেও কিছু জিনিসপত্র তৈরি করতেন। এর মধ্যে রয়েছে, বাঁশের তৈরি টুকরি, হাঁসমুরগির খাঁচা, মাছ ধরার আন্তা ও মাদুরসহ আরো অনেক জিনিসপত্র। নুর আলম ও তার একমাত্র ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন (২৭) লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া, মান্দারী, বটতলী, চন্দ্রগঞ্জ, চৌপল্লি ও জকসিনসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাটবাজারে ভ্রাম্যমাণভাবে এসব জিনিসপত্র খুচরামূল্যে বিক্রি করতেন।

২০০৯ সালে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে হাজিরপাড়া বাজারে একটি দোকানঘর ভাড়া নেন নুর আলম। এরপর বিভিন্ন এনজিও সংস্থার নিকট থেকে ঋণ নিয়ে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র আমদানি করে এই ঘরে মজুত রাখতেন। বিভিন্ন বাজারে এসব মালামাল আনা-নেওয়ার সুবিধার্থে ঋণের টাকা দিয়ে একটি অটোরিক্সা ক্রয় করেন। অবসরে ওই রিক্সাটি যাত্রী আনা-নেওয়ায় ব্যবহার হতো। কুটিরশিল্পের ব্যবসা ও রিক্সার আয় দিয়ে ভালোই চলছিল নুর আলমের ৮ সদস্যের পরিবার।

কিন্তু গত শনিবার (২০ জুলাই) বিকেলে হাজিরপাড়া বাজারে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায় নুর আলমের কুটিরশিল্পের মালামালসহ ওই ভাড়া ঘরটি। অটোরিক্সাটিও পুড়ে যায়। এ ঘটনায় চরমভাবে ভেঙে পড়েছেন নুর আলম ও তার পরিবার। সব হারিয়ে এখন তারা নিঃস্ব।

ভুক্তভোগী নুর আলম দৈনিক অধিকারকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডে আমার স্বপ্নের ‘কুটিরশিল্প’ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নগদ টাকাসহ প্রায় ২৭ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব। আমি জানি না, কিভাবে চলবে আমার সংসার? এনজিও আশা, সোপিরেট ও উদ্দীপনসহ পাইকারদের নিকট প্রায় ১৮ লাখ টাকা দেনা রয়েছি। কিভাবে পরিশোধ করবো এ টাকা? ‘এক মুহুর্তের আগুনে আমাদের সব পুড়ে গেছে। আগুন নেভানোর অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারি নি’। কথাটুকু বলেই কেঁদে ফেলেছেন নুর আলমের ছেলে মো. ইসমাইল।

উল্লেখ্য, শনিবার বিকেলে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া বাজারে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক ভয়াবহ অগ্নিকানণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে বাসাবাড়িসহ ১৯টি দোকান ও গুদাম পুড়ে যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ওডি/এসএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড