পাবনা প্রতিনিধি
হাতুড়ে ডাক্তারের হাতে খতনার সময় রিসকাত হোসেন নামে এক মাস ২৫ দিন বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২০ জুলাই) বিকেলে পাবনা ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছে।
নিহত শিশু লালপুর থানার পাটকেবাড়ি (পশ্চিমপাড়ার) সজিব হোসেনের ছেলে। আর অভিযুক্ত 'ডাক্তার' নামধারী মেডিক্যাল সহকারীর নাম ইকবাল হোসেন (ডিএমএফ)। ঘটনার পর সে ও তার সহেযাগী জয়ন্ত পালিয়ে যান। জয়ন্ত স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে কাজ করেন। শিশুটির প্রস্রাবজনিত সমস্যায় তার অভিভাবকরা ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার অধিকার বহির্ভূত কাজ তথা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে।
শিশুটির ফুপু তাসলিমা খাতুন জানান, ৫ দিন আগে শিশুটির প্রসাবে সমস্যা দেখা দেয়। তারা শিশুটিকে চিকিৎসা করানোর জন্য ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসেন। তখন ডাক্তার নামধারী ইকবাল হোসেন বলেন, প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়েছে, খতনা দিতে হবে। টাকা না থাকায় তারা ফিরে যান।
শনিবার সকালে ডাক্তার ইকবাল শিশুটিকে খতনা দিতে হবে বলে মোবাইল ফোনে শিশুটির মা রুবিকে ডেকে আনেন। ১৫শ টাকার চুক্তিতে দুপুর দুইটার দিকে শিশুটিকে কয়েকটি ইনজেকশন দিয়ে খতনা দেন। এ সময় শিশু রিসকাত মারা যায়।
তিনি আরও জানান, ডাক্তার শিশুটি মারা গেছে বুঝতে পেরে তার মায়ের কোলে দিয়ে সহযোগী জয়ন্তকে নিয়ে পালিয়ে যান। তিনি এ ঘটনাটিকে হত্যা হিসেবে দাবি করে ডাক্তার ইকবাল ও জয়ন্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
স্থানীয়রা জানান, ডাক্তার নামধারী এ হাতুড়ে ইকবাল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা ওষুধপত্র পাচার করে। তার সহযোগী বাজারের ওষুধ বিক্রেতা জয়ন্তের মাধ্যমে বিক্রয় করেন। তারা প্রশ্ন করেন, জয়ন্ত কোন যোগ্যতায় ও অধিকারে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান তা তারা জানতে চান। তারা আরও জানান, ভুল চিকিৎসা দিয়ে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। এদের শাস্তি হওয়া দরকার।
শিশুটির মা রুবি খাতুন বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন বলে তার পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন। তিনি সন্তানের হত্যাকারীর ফাঁসি দাবি করেছেন।
শিশুটির দাদা ইদ্রিস আলী জানান, তার ছেলে সজিবের প্রথম সন্তান ছিল রিসকাত। কিন্তু ডাক্তার এভাবে তাকে মেরে ফেলল। তিনি ডাক্তারের শাস্তি দাবি করেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আব্দুল বাতেন জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সুন্নতে খতনা দেয়ার কোনো যন্ত্রপাতি ও অনুমতি নেই। তিনি জানান ইকবাল হোসেন একজন মেডিকেল সহকারী। একজন কর্মচারী ইকবালের অপারেশন করার যোগ্যতাও নেই, অধিকারও নেই ।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটির লাশ ও ব্যবহৃত ওষুধের বোতল উদ্ধার করেছে। শিশুটির লাশ উদ্ধার করে রবিবার সকালে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত শিশুটির পরিবার থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ডাক্তার নামধারী ইকবাল হোসেন ও তার সহযোগী জয়ন্ত পলাতক রয়েছেন বলে তিনি জানান।
পাবনার সিভিল সার্জন ডাক্তার মেহেদী ইকবাল জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। দায়ী কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওডি/এএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড