• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পেয়ারার ভাসমান রাজ্যে ভেসে যায় চাষির স্বপ্ন

  হাসান আরেফিন, ঝালকাঠি

২০ জুলাই ২০১৯, ১৬:২৯
ভাসমান পেয়ারার হাট
ঝালকাঠি সদর উপজেলা ভীমরুলী এলাকায় ভাসমান পেয়ারার হাট (ছবি- দৈনিক অধিকার)       

বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারার ভর মৌসুম চলছে এখন। পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি ও বরিশালের বানারীপাড়ার ৩৬টি গ্রাম জুড়ে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পেয়ারা বাগান। প্রায় ৩১ হাজার একর জমির উপর এ পেয়ারার রাজ্য। পাইকার ও চাষিদের বেচাকেনার ধুম চলছে পেয়ারার মোকাম (হাট-বাজার) গুলোতে। আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্রের অর্ধেক এই আড়াই মাস জমে উঠে পেয়ারা বেচা-কেনা। পেয়ারা চাষ ও ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে ২০ টিরও বেশি ছোট বড় ব্যবসা কেন্দ্র। স্থানীয়ভাবে বলা হয় পেয়ারার মোকাম।

এ মোকাম গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আটঘর, কুড়িয়ানা, ভিমরুলী, ডুমুরিয়া, শতদশকাঠি, বাউকাঠি। প্রতিদিন সকালে এসব মোকামে চাষিরা ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় সরাসরি বাগান থেকে পেয়ারা নিয়ে আসে পাইকারদের কাছে। তা কিনে ট্রলার যোগে নৌ-পথে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

এবার মৌসুমের শুরুতেই ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে এবং মণপ্রতি ৮শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমাণে প্রতি মণ ২শ থেকে ২শ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে প্রতিবছর পেয়ারার মৌসূমে বিভিন্ন স্থান থেকে নৌপথে পেয়ারা বাগানে আসেন পর্যটকরা। পেয়ারা বাগানে এসে দেখে মুগ্ধ হয়ে এখান থেকে পেয়ারা কিনেও নিচ্ছেন পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য।

পেয়ারা বাগান ঘুরে জানা গেছে, পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, আদমকাঠী, ধলহার, কঠুরাকাঠি, আন্দাকুল, জিন্দাকাঠি, ব্রাহ্মণকাঠি, আতা, জামুয়া, মাদ্রা, ঝালকাঠি, শশীদ, পূর্ব জলাবাড়ী,আদাবাড়ি ও জৌসার গ্রাম এবং ঝালকাঠি ও বরিশালের বানারীপাড়ার মোট ৩৬টি গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষাবাদ হয়। কয়েক হাজার পেয়ারা বাগানে হাজার হাজার চাষী এ পেয়ারা চাষাবাদ করে আসছে।

অপরদিকে এখানে প্রচুর উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে চাষীদের লোকসানের মুখে পড়তে হয় প্রতিবছরই। অপরদিকে এ বছর পেয়ারায় দেখা দিয়েছে এনথ্রাকনোস নামক এক ধরনের ভাইরাস। যা স্থানীয়ভাবে ছিটপড়া রোগ বলে সনাক্ত করা হয়। এছাড়া বর্ষায়ও পেয়ারা সংগ্রহ ও বিক্রিতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় উৎপাদিত পেয়ারা বাগানেই নষ্ট হতে শুরু করেছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও উদ্যোক্তার অভাবে হিমাগারসহ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে না উঠায় এবং উৎপাদন খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা পেয়ারা চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে। এ বছর ফাল্গুনে পেয়ারা গাছে ফুল ধরার পর অতিরিক্ত খড়ায় পানির অভাব দেখা দেয়ায় ফুল ঝড়ার পাশাপাশি অনেক গাছও মারা যায়।

পেয়ারা চাষিরা জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের সঙ্গে সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে পেয়ারা দ্রুত বাজারজাত করা যেত। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা হলে পেয়ারা চাষিদের বাগান থেকে সরাসরি ট্রাক যোগে প্রতি বছর মৌসুমের শুরুতেই ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেয়ারা পৌঁছে দেওয়া এবং পচন রোধ করা সম্ভব হতো।

গাছ থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করা হচ্ছে (ছবি- দৈনিক অধিকার)

আড়তদার লিটন হালদার বলেন, ভিমরুলী দক্ষিণা লের সবচেয়ে বড় পেয়ারার মোকাম। মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মন পেয়ারা বিক্রি হয়। তবে বাউকাঠি থেকে ভিমরুলী হয়ে কীর্তিপাশা পর্যন্ত সড়ক পথ হলে দ্রুত প্রতি দিনের পেয়ারা প্রতিদিন বিভিন্ন জেলায় পৌঁছানো সম্ভব হতো। ভিমরুলী মোকাম থেকে নৌ পথে খুলনা, ফেনী, ঢাকা, সিলেট, পটুয়াখালি, ভোলা, মাদারিপুর, নাটোর, বরিশাল হাজার হাজার মন পেয়ারা যাচ্ছে। সড়ক পথের যোগাযোগ থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে এসব জেলায় পেয়ারা নেয়ার জন্য পাইকাররা চাষিদের আরো বেশি দাম দিয়ে পেয়ারা কিনত।

পেয়ারা চাষী সুভাষ মজুমদার জানান, এ বছর পেয়ারায় ছিট পড়া রোগ পুনরায় দেখা দিয়েছে। ফলে পেয়ারা বড় হওয়ার আগেই ঝরে পড়ছে। পেয়ারা বাগান পরিচর্যাসহ শ্রম মজুরি বেশি হওয়ায় চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কুড়িয়ানার পেয়ারা চাষী বিশ্বজিত্ চৌধুরী জানান, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে বড় সাইজের পেয়ারা প্রসেসিং করে বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফজলুর রহমান জানান, ঝালকাঠি সদর উপজেলা উত্তরাঞ্চলের চাষীরা ব্যাপকভাবে পেয়ারার চাষ করেন। পেয়ারা চাষীদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে হিমাগার থাকলে চাষীদের আগ্রহ বাড়বে।

ওডি/এসএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড