• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চিকিৎসার সামর্থ্য নেই তাই শিকলে বাঁধা বাবা

  আমিনুল ইসলাম জুয়েল, পাবনা

২০ জুলাই ২০১৯, ১৩:৩৯
শিকলে বাঁধা
শিকলে বাঁধা মানসিক ভারসাম্যহীন আব্দুল প্রামাণিক ( ছবি : দৈনিক অধিকার)

আব্দুল প্রামাণিকের বয়স ষাটের ওপরে। কয়েক মাস আগেও তিনি ছিলেন একজন সুস্থ ও পরিশ্রমী মানুষ। কিন্তু হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। পাবনা মানসিক হাসপাতালের ডাক্তারদের দিয়ে আউটডোরে দেখাতে পারলেও ভর্তির ব্যবস্থা করতে পারেননি তার স্বজনরা।

মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আব্দুল প্রামাণিক এখন লোকজনকে বিরক্ত করেন। তাই তার ছেলে দুলাল হোসেন অনেকটা নিরুপায় হয়েই বাবার হাতে পায়ে শিকল পরিয়ে বাড়িতে বেঁধে রেখেছেন। এ ঘটনাটি পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা মধ্যপাড়া গ্রামে।

আব্দুল প্রামাণিকের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার পায়ে শিকল ও তালা। কয়েকদিন আগে হাতের শিকল খুলে দেওয়া হয়েছে তার পরিবারের লোকজন জানান। একমাত্র শ্রমিক ছেলের উপার্জনে দুমুঠো খাবার জুটলেও মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। ভাইয়ের দুরবস্থার বর্ণনা দেন তার ছোট বোন জরিনা খাতুন।

অশ্রুসিক্ত জরিনা জানান, তার ভাই স্ত্রীকে হারিয়েছেন বছর চারেক হলো। তখন থেকেই তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। মাস ছয়েক আগেও তার ভাই ভ্যান চালিয়ে ছেলের সংসারে সাহায্য করতেন। এখন তিনি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় প্রতিবেশীসহ কিছু আত্মীয়-স্বজনকেও মারধর করেছেন। সবাই এখন তাকে পাগল বলে।

ছেলে দুলাল হোসেন বলেন, চার বছর আগে তার মা মারা যান। এরপর তিনি বাবাকে ফেলে দেননি। এক সঙ্গে সংসার করছিলেন। কয়েকমাস আগে তারা বাবা মানসিকভাবে পুরো অসুস্থ হয়ে যান। ধার-দেনা করে পরপর দুইবার পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু ভর্তি করার ব্যবস্থা করতে পারিনি। এজন্য অনেক তদবির লাগে। যা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এ দিকে বাবা সুস্থ হননি।

দুলাল বলেন, বাবা আমাকেসহ প্রতিবেশীদের অনেককে মারধর করেছেন। কারও কোনো ক্ষতি করে ফেলতে পারেন, এ ভয়ে নিরাপত্তার জন্য তাকে শিকলে বেঁধে রেখেছি। তার কষ্ট দেখে কয়েকদিন আগে অবশ্য হাতের শিকল খুলে দিয়েছি। কিন্তু ছেলে হয়ে তাকে শিকলে বেঁধে রাখতে আমার খুব কষ্ট হয়, তবে আমি নিরুপায়! পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা গেলে ঠিকমতো চিকিৎসা পেয়ে তিনি হয়তো সুস্থ হবেন।

এ ব্যাপারে গুনাইগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, পরিবারটি খুবই অসহায়। আবদুল প্রামাণিক নামের ওই ব্যক্তির সুচিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু তার দরিদ্র ছেলের পক্ষে তার করা সম্ভব নয়। তবে তাকে শিকলে বেঁধে করে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমার জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। খুব শীঘ্রই তিনি ওই বাড়ি যাবেন এবং সম্ভাব্য সহযোগিতা করার ব্যবস্থা করবেন।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস জানান, হাসপাতালে ভর্তির কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম রয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে আসলে বিধি অনুযায়ী তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড